X

তনুর ময়নাতদন্ত নিয়ে নাদিয়া ইসলামের ফেসবুক নোটের পোস্টমর্টেম!

এক সপ্তাহ আগে বলেছিলাম তনুর ময়নাতদন্ত নিয়ে নাদিয়া ইসলামের এপ্রিল ৫, ২০১৬ ইং তারিখের যে ফেসবুক লেখাটা আছে সেটার ভুল এবং অসংগতি তুলে ধরবো, আমার এই লেখাটি সেটা নিয়ে। এই লেখায় বোল্ড যে অংশ পাবেন সেটা নাদিয়ার লেখা, বাকিটা আমার।
বলে রাখা ভাল আমি আইনী মারপ্যাচ নিয়ে এখানে কোন বক্তব্য দেবনা, আমি আলোচনা করবো অত্যন্ত সাধারন কিছু বিষয় নিয়ে যা আপনাদের প্রায় সবার চোখে পড়ার বা জানার কথা ছিল।
নাদিয়ার লেখা সেই নোটের সারমর্ম কি? সহজ ভাষায় সারমর্ম হচ্ছে যে ডাক্তাররা তনুর ময়নাতদন্ত করেছেন তাদের অযোগ্যতার কারনেই তনুর রেপ হবার ব্যাপারটা ধরা পড়েনি, ডাক্তাররা যদি এভাবে এই এই ফরেনসিক পদ্ধতি অবলম্বন করতেন তাহলে অবশ্যই রেপের ব্যাপারটা ধরা পড়তো, দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত ব্যাপারটা ছিল পুরোই ভূয়া একটা ব্যাপার!
আসুন এবার নাদিয়ার সেই লেখার প্যারা বাই প্যারা বিশ্লেষন করা যাক!

“কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডক্টর কামদা প্রসাদ সাহা এবং ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডক্টর শারমিন সুলতানা বলছেন, ২-৫% ময়নাতদন্তে মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায় না। কথা সত্যি। তা যেই তনু মারা গেছেন ২০ মার্চ বা তারও আগে, তার ময়নাতদন্ত যদি আজকে করেন, তাইলে ২-৫% ক্যানো, ৯৯% সম্ভাবনা আপনি মৃত্যুর কারণ কিছুই খুঁইজা পাবেন না। যা পাইতে পারেন, তা হইলো আপনার মদ গাঞ্জা ও এল-এস-ডি খাইয়া ফরেনসিক সায়েন্স পাশ করার জাল সার্টিফিকেট।”

ইয়ে এখানে কোন ময়নাতদন্তের কথা বলা হচ্ছে? প্রথমটা না দ্বিতীয়টা? তনুর মৃতদেহ পাওয়া যায় ২০-৩-২০১৬ তারিখ রাতে, প্রথম ময়নাতদন্ত হয় ২১-৩-২০১৬ তারিখে (রাত ১২টার পরই ২১ তারিখ রিমেম্বার!), যখন সব ধরনের আলামত পাবার কথা ছিল! আর দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয় ৩০-৩-২০১৬ তারিখে (দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত সম্পর্কে পরে বিস্তারিত বলছি), আপনাদের কি মনে হয়েছিল যে প্রথম ময়নাতদন্ত আদৌ হয়নি বা হলেও ‘নম নম’ জাতীয় কিছু একটা হয়েছিল?
পুলিশ যখন কোন ডেড বডি হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় (জী, লাশ পাঠানো পুলিশের দায়িত্ব, হাতে হারিকেন নিয়ে লাশ খুজে বের করে সেটাকে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে টেনে আনা ডাক্তারদের পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে পরেনা!) তখন সেটাকে ময়নাতদন্ত করা হয়, আর ইয়ে, যখন কোন লাশ ময়নাতদন্তের জন্য আসে, তখন ফরেনসিকের হেড যিনি আছেন তিনি চোখের সামনে যাকে পান (রাম, শ্যাম, যদু, মধু, কোন ইন্টার্নী ডাক্তার) তাকেই ডাক দিয়ে ময়নাতদন্ত করার দায়িত্ব দিয়ে দেন না। কাজের রোস্টার অনুযায়ী কোন ডাক্তার ময়নাতদন্ত করবেন তা নির্ধারিত হয়। আপনারা যারা মনে করছেন তনুর পোস্ট মর্টেম কোন ‘হেজিপেজি’, ‘বালছাল’ ডাক্তার করেছেন, যার ‘ভুলের কারনে’ আবার তনুর লাশ তুলতে হয়েছে, তাদের সবিনয়ে জানাতে চাই তনুর প্রথমবার ময়নাতদন্তের দায়িত্বে ছিলেন ডাক্তার শারমিন (DFM, MCPS), যার ৮ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা আছে প্লাস তিনি ফরেনসিকের একজন শিক্ষিকাও বটে! আর কার কাছে তিনি সেই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন সেটা কি জানেন? ডাক্তার কামদা প্রসাদ সাহার কাছে, যিনি কুমিল্লা মেডিক্যালের ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের প্রধান এবং একই সাথে MBBS, DFM, MCPS, DHE, MSc এবং LLB র মত অত্যন্ত ‘আপত্তিকর’ কিছু ডিগ্রীধারী, জী, ইনিই তিনি যিনি আপনাদের নজরে অপর ‘মদ-গাঞ্জা-এলএসএসডি খাওয়া, জাল সার্টিফিকেট ধারী’ লোক, কেবল তাই না, ২০ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা এবং আক্ষরিক ভাবেই কয়েক হাজার লাশের পোস্ট মর্টেম করার অভিজ্ঞতা উনার আছে।
এতসব কিছু আমি কিভাবে জানলাম? খোজ নিয়ে, আবার কিভাবে? ঐ লেখা পড়ার সময় আমিও তাদের পুরো যোগ্যতা জানতাম না, তবে এটুকু অবশ্যই জানতাম এবং আপনাদেরও যা জানা উচিত ছিল তা হচ্ছে যে ‘মদ-গাঞ্জা-এলএসএসডি খাওয়া, জাল সার্টিফিকেট ধারী’ কোন ব্যাক্তি তনুর ময়নাতদন্তের দায়িত্ব পাবার কথা না। তো মানে কি দাড়ালো? মানে দাড়ালো তনুর কেস কোন ‘হেজিপেজি’ ডাক্তার করেননি, যিনি করেছেন এবং যিনি ব্যাপারটা সুপারভাইজ করেছেন তারা দুজনেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ এবং প্রতিষ্ঠিত। অবশ্য কেউ যদি এই দাবী করেন যে, ‘সার্টিফিকেট বা অভিজ্ঞতা আছে বলেই যে তারা ফরেনসিক বিষয়ে আমাদের চেয়ে বেশী জানবেন এমন কোন কথা নেই’, তাহলে এই সব ফেবু পন্ডিতদের ব্যাপারে আমার আর কোন মন্তুব্য নেই 😉

“আমি একজন ফরেনসিক সায়েন্টিস্ট। কিন্তু ফরেনসিক সায়েন্স না পড়লেও শিক্ষিত মানুষজন টিভিতে ক্রাইম সিরিজ দেইখা ও থ্রিলার নভেল পইড়া জানেন, ভ্যাজাইনা এবং (ইজাকুলেশানের প্রমাণ পাওয়া না গেলে) আন্ডারওয়্যার থিকা রক্ত, সিমেন এবং/অথবা থুতুর “সোয়াব” সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ধর্ষণের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সংগ্রহ ও নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় স্টোর করার কথা। রক্তের টক্সিকলজি রিপোর্টে দেরি হইলে সমস্যা নাই, কিন্তু লাশ কবর দেওয়ার আগেই তা করতে হবে। ধর্ষণ (বা সম্ভাব্য ধর্ষণ) কেইসে প্রথমেই আপনার সিমেন কনফার্মেটরি টেস্ট করার কথা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রাথমিকভাবে ‘এ্যাসিড ফসফেট’ পরীক্ষার মাধ্যমে এই টেস্ট করা হয়। অত্যন্ত সহজ টেস্ট, একদমই ব্যায়বহুল না, এমনকি বাড়িতে বইসা যেকোনো কাপড়ে প্রোটিন সনাক্ত করার জন্য আপনি এই টেস্ট করতে পারেন। সিমেন অর্থাৎ প্রোটিনের অস্তিত্ব পাওয়া গেলে তখন আপনি রাপিড স্টেইন আইডেন্টিফিকেশানের মাধ্যমে কনফার্মেটরি টেস্ট এবং সেইখানে পসিটিভ রেসাল্ট পাইলে পরবর্তীতে ডি-এন-এ প্রোফাইলিং এর মত ব্যায়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ পরীক্ষায় যাইতে পারেন। তার আগে না।”

কিউরিয়াস মাইন্ড ওয়ান্টস টু নো, তনুর লাশ প্রথমবার ময়না তদন্ত করার সময় ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার কোন টেস্ট করেছেন, কোনটা করেননি, কি সংরক্ষন করেছেন আর কোনটা ফেলে দিয়েছেন, এটা ‘কে বা কাহারা’ দেখেছে এবং কনফার্ম করেছে? বাংলাদেশ সরকার কি আজকাল পোস্টমর্টেম ব্যাপারটা মর্গ থেকে সরাসরি লাইভ টেলিকাস্ট করা শুরু করেছে নাকি? ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার শারমিন কি কোথাও বলেছেন তিনি এভাবে এসব করেছেন আর এসব করেননি? কোন ‘প্রত্যক্ষদর্শী’ এটা জানিয়েছে বলতে চান? পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে তনুকে ‘জবাই’ করে হত্যা করা হয়েছে দেখেছেন এমন একজন ‘প্রত্যক্ষদর্শীর’ ফেসবুকীয় পোস্ট কি আপনারা এর মধ্যেই ভুলে গেছেন? যারা ওয়াকিফহাল নন, বাংলাদেশে ময়নাতদন্ত করার সময় ডোম এবং ডাক্তার বাদে সাধারনতঃ কেউ থাকেনা, মাঝে মাঝে ইন্টার্নরা থাকতে পারে কিন্তু এই কেসে প্রথমবার ময়না তদন্তের সময় ডোম আর ডাক্তার বাদে আর কেউ ছিলনা, তাই আসলে কি করেছেন আর কি করেননি সেটা ডাক্তার শারমিন বাদে আর কেউ জানেনা, আর আমার যদি ভুল না হয়, উনি কোথাও বিতং করে উনার ময়নাতদন্ত পদ্ধতি ব্যাখ্যা করেননি!

“মেয়েদের ভ্যাজাইনায় ইজাকুলেশানের পর ‘নন-মোটাইল’ স্পার্ম সাত দিন পর্যন্ত টিকা থাকতে পারে। ভ্যাজাইনার এ্যাসিডিক পরিবেশের কারণে ‘মোটাইল’ স্পার্ম মাত্র চার থিকা ছয় ঘন্টা বাঁইচা থাকে ভ্যাজাইনাল ক্যানালে। তবে ‘নন-মোটাইল’ স্পার্ম দিয়াও ধর্ষক সনাক্তকরণ সম্ভব। মানে যদি আপনার ইচ্ছা থাকে, তাইলেই। এমনকি পুরুষের ভ্যাসেকটমি করা থাকলে বা বাইরে ইজাকুলেশান হইলে বা ইজাকুলেশান না হইলে ও কনডম ব্যাবহার হইলেও ফ্লুরোসেন্স ইন সিটু হাইব্রিডাইজেশান (ফিশ)-এর মাধ্যমে ভ্যাজাইনাতে পুরুষের ‘এপিথেলিয়াল সেল’ ধর্ষণের তিন সপ্তাহ পরেও সনাক্ত করা সম্ভব, মানে সরকার যদি বিশেষ কাউরে বাঁচাইতে না চান আরকি”

ইয়েস অফকোর্স! কিন্তু একটা মেয়ের যদি অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় তাহলে সেটা ‘রেপ’ কেসই হতে হবে এটাই বা কোথায় আছে? বাংলাদেশের সংবিধানে নাকি কোন আইন বইয়ে? হ্যা, হতে পারে এটা রেপ কেস, বাংলাদেশে অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু হওয়া কোন তরুনীর মৃতদেহ পাওয়া গেলে ভাল সম্ভাবনা আছে সে রেপ হয়েছে, কিন্তু ‘অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু হওয়া কোন তরুনীর মৃতদেহ = রেপ’ এ ধরনের কোন সার্বজনীন নিয়ম নেই। তনুর কেসে প্রাথমিক ভাবেই রেপের কোন প্রমান পাওয়া যায়নি (এক্সটারনাল মার্কস এবং সোয়াব টেস্ট), এডভান্স টেস্ট তো আরো পরের ব্যাপার। আর “ফ্লুরোসেন্স ইন সিটু হাইব্রিডাইজেশান (ফিশ)” পরীক্ষার কথা বলতে চান? উত্তম প্রস্তাব! শুধু একটাই সমস্যা, বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত কোন রেপ কেসে এই টেস্ট করা হয়নি, বাংলাদেশে আসলে এই পরীক্ষার ব্যাবস্থাই নেই! কেন নেই, সেটা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে কেউ ড্রাইওয়াস করতে চাইলে করতে পারেন, প্লীজ বি মাই গেস্ট! কিন্তু যে টেস্টের ব্যাবস্থা বাংলাদেশেই নেই, কখনো কোন বাংলাদেশী কেসে করা হয়নি, সেই টেস্ট কেন ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার করলেন না, এই অভিযোগ তোলা আর যে আর্মির কাছে মেশিনগান নেই, যুদ্ধে সেই আর্মি মেশিনগান কেন ব্যাবহার করেনি সেই অভিযোগ তোলা একই কথা!

“তনুর প্রথম ময়নাতদন্ত হয় ২০ মার্চ কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এই সময় ময়নাতদন্ত ও লাশের পোস্টমর্টেমে বেশ কিছু অসঙ্গতি ছিলো বইলা তদন্তকারী সংস্থা জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পক্ষ থিকা জানানো হয়। পুলিশ লাশের গায়ের জখম থিকা ডি-এন-এ নমুনা ও লাশ থিকা অন্যান্য এভিডেন্স সংগ্রহে প্রক্রিয়াগত ভুল করায় কেইস এরপর ২৫ মার্চ ডিবিতে নিয়া যাওয়া হয়। এবং দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত শুরু হয় ৩০ মার্চ, লাশ কবর থিকা তোলার পরে”

“ময়নাতদন্ত ও লাশের পোস্টমর্টেমে বেশ কিছু অসঙ্গতি…”, এক্সকিউজ ইউ, ‘ময়নাতদন্ত’ আর ‘পোস্টমর্টেমে’ তফাতটা কি? ময়নাতদন্তকেই ইংলিশে বলা হয় পোস্টমর্টেম। ডিবি জানিয়েছে? কোথায় জানিয়েছে? কাকে জানিয়েছে? কিসের সাথে কিসের অসংগতি জানিয়েছে? কোথাও কোন ‘অসংগতি’ পাওয়া গেলে তদন্ত শেষ হবার আগে সেটা মিডিয়াকে জানানোর এখতিয়ার কি ডিবির আদৌ আছে? “পুলিশ লাশের গায়ের জখম থিকা ডি-এন-এ নমুনা ও লাশ থিকা অন্যান্য এভিডেন্স সংগ্রহে প্রক্রিয়াগত ভুল করায়…” সিরিয়াসলি!বাংলাদেশী পুলিশ ভিকটিম এর দেহ থেকে বা লাশ থেকে ‘এভিডেন্স’ সংগ্রহ করে, জীবনে এই প্রথম শুনলাম! বিদেশে করে কিনা জানিনা তবে বাংলাদেশে অস্বাভাবিক মৃতুর শিকার কোন মৃতদেহ পাওয়া গেলে পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট (লাশ কিভাবে কোথায় পড়ে আছে, লাশের পরনে কি আছে, লাশের দেহভঙ্গি কি, ইত্যাদি!) তৈরী করে লাশটাকে জাস্ট ভ্যানে/গাড়িতে তুলে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে আসে, লাশের গা থেকে নমুনা সংগ্রহের ব্যাপারটা তারা ডাক্তারদের জন্য তুলে রাখে, তবে হ্যা, মৃতদেহের আশে পাশে যদি গুরুত্বপূর্ন কিছু পাওয়া যায়, যেমন গুলির খোসা, চাপাতি, ইত্যাদি, তখন সেটাও তারা নিয়ে আসে। বাংলাদেশের পুলিশ যে বিদেশী টিভির ক্রাইম সিরিয়ালগুলির মত ‘ব্যাকরন সম্মত’ উপায়ে চলেনা বা কাজ করেনা সেটা বাংলাদেশী মাত্রেই জানা উচিত!

“এখন আমার প্রশ্ন হইতেছেঃ
১। ২০ মার্চ লাশ পাওয়ার সাথে সাথে কুমিল্লা মেডিক্যাল যেই পোস্টমর্টেম করে, তাতে যদি স্পার্মের (বা রক্তের ও থুতুর) অস্তিত্ব পাওয়া না যায় তাইলে দ্বিতীয়বার কবর থিকা লাশ তোলার দরকার কী? কার জন্য নাটক সাজাইতেছেন সরকার?
২। লাশে যদি স্পার্মের অস্তিত্ব পাওয়া যায় এবং তা সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয়, তাইলে সংরক্ষিত সেই স্যাম্পল থিকাই ডি-এন-এ প্রোফাইলিং সম্ভব। লাশ ক্যানো দ্বিতীয়বার তোলা হইলো?
৩। প্রথমবার যদি প্রক্রিয়াগত ভুল হয়, তাইলে তা সংশোধণ করার জন্য ১০ দিন সময় নেওয়া হইলো কী কারণে, যেইখানে আপনি জানেন, ১০ দিন পরে লাশের শরীরে আপনি কোনো ডি-এন-এ এভিডেন্স পাবেন না?”

ইয়ে, দ্বিতীয়বার লাশ তোলার ব্যাপারটা কিন্তু সব সময় সরকারের বা কখনো ময়নাতদন্তকারী ডাক্তারের ইচ্ছায় হয়না। ব্যাপারটা এমন না যে ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার ময়নাতদন্ত করে লাশ ফেরত দিয়ে দিলেন, কবর দেয়া হয়ে গেল, তারপর ডাক্তারের মনে হল, আয় হায়! আমিতো ঐ প্রসিডিওর ফলো করিনি! ঐ লাশ তোল, দেখিতো কিছু পাওয়া যায় কিনা!
কেবলমাত্র কয়েকটা কারনে লাশ তোলা হতে পারে, আর লাশ তোলার আদেশ দিতে পারেন কেবলমাত্র একজন ব্যাক্তি, মাজ়িস্ট্রেট! যেসব কারনে লাশ তোলা হতে পারে তার মধ্যে প্রথমটা হচ্ছে বাদীর আবেদন, বাদীর মনে হতে পারে প্রথমবার ঠিকমত ময়নাতদন্ত করা হয়নি, আরেকবার করা হোক, তখন বাদীর অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য প্রায় সময় ম্যাজিস্ট্রেট আবার লাশ উত্তোলনের অনুমতি দিয়ে দেন, এর সাথে ডাক্তারদের যোগ্যতা-অযোগ্যতার কোন সম্পর্ক নেই। পুরো ব্যাপারটাই বাদীর মানসিক শান্তির ব্যাপার।
দ্বিতীয়তঃ যদি তদন্তকারী সংস্থার মনে হয় আরেকবার ময়না তদন্ত হওয়া দরকার, এটা অনেক কারনেই সেই সংস্থার মনে হতে পারে, জেনুইন কারনে হতে পারে আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘হাউ কাউ’ এর কারনেও হতে পারে। তবে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে নতুন এলিমেন্ট পাবার ঘটনা বাংলাদেশে বিরলতম, যেকোন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা জানে দ্বিতীয়বার লাশ তুলে নতুন কিছু পাবার সম্ভাবনা আসলে ক্ষীন!
ডাক্তাররা কিছু পাওয়া যাবেনা জেনেও কেন দ্বিতীয় ময়না তদন্ত করেছেন? কারন এটা তাদের চাকুরী, পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পাঠালে তাদের তদন্ত করতেই হবে, দুই বার কেন, একই লাশ যদি পুলিশ প্রতিদিন একবার করে ময়না তদন্ত করে দিতে বলে তাদের সেটাও ময়নাতদন্ত করে দিতে হবে! সরি টু সে, ‘একবার দেখছি তো, আবার কি দেখুম!’ বলার ক্ষমতা ডাক্তারদের দেয়া হয়নি।

“৪। ভিকটিমের হাতে পায়ে জখমের দাগ প্রাথমিক পোস্টমর্টেমেই চোখে ধরা পড়ার কথা। প্রাথমিক পোস্টমর্টেমে দাগের উল্লেখ আসে নাই, প্রোটিনের উল্লেখ আসে নাই, স্পার্ম সেল পাওয়া যায় নাই, এপিথেলিয়াল সেল পাওয়া যায় নাই, তো পাওয়াটা গেছে কী? ধর্ষণের কেইস, আপনি আসল জিনিস বাদ দিয়া করতেছেন টক্সিকলজি টেস্ট। এরপর রক্তে ‘বিষ’ পাওয়া যায় নাই তাই ‘হাওয়া’ খাইয়া তনু মারা গেছেন এমন রিপোর্ট লিখা লাশ কবর দিয়া দেওয়ার অনুমতি দিলেন। বাহ! আপনি কোন্‌ কলেজ থিকা পাশ করছেন ভাইজান? সরকার আপনার মামা চাচা কী লাগে গো?”

মেয়ে মরলেই ধর্ষন কেস হতে হবে? এটা ধর্ষনের কেস এই ফতোয়া ফেসবুকের বাইরে কে দিল? কোন সংবাদপত্রে এসেছে যে তনু আসলে ধর্ষিত হয়েছে? ‘ধর্ষন’ই যে হয়েছে এটা তারা কিভাবে নিশ্চিত হল? ময়নাতদন্ত কি সাংবাদিকরা করেছে নাকি ডাক্তাররা? নাকি ময়নাতদন্তের সময় সাংবাদিক সামনে রেখে ডাক্তাররা ময়নাতদন্ত করেছেন? কেবল তাইনা, ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার যদি এ পর্যায়ে বলে থাকেন যে তনুর মৃত্যুর কোন কারন পাওয়া যায়নি, তখন তিনি সেটা নিঃসন্দেহে তনুর ভিসেরা রিপোর্টের কথা বাদ দিয়ে বলেছেন, যা এখনো তিনি হাতে পাননি, হাতে পেলেই তিনি ফাইনাল রিপোর্ট দিতে পারবেন। রিপোর্ট এখনো কেন পাননি? কারন সকালে স্যাম্পল পাঠালে বিকালে রিপোর্ট পাওয়া যাবে, বাংলাদেশ এত উন্নত এখনো হয়ে উঠেনি। কিউরিয়াস মাইন্ড ওয়ান্টস টু নো, ময়না তদন্তকারী ডাক্তারের রিপোর্টে ঠিক কি কি লেখা আছে, সেটা কোথায় প্রকাশ হয়েছে এবং কিভাবে জানা গেল?

“৫। ক্রাইম সিন ক্যানো প্রটেক্ট করা হয় নাই? এলাকার ২,২০০ ফিট এলাকা এখনো অরক্ষিত ক্যানো? আপনি সিন প্রটেক্ট করবেন না, শেয়ালের কাছে মুরগী বর্গা দিয়া, সিনে গরু ঘোড়া আর্মি, বি-ডি-আর, ডি-বি, র’, মোসাদ, সি-আই-এ চড়তে দিয়া বলবেন, এভিডেন্স পান নাই, তা তো হবে না, নাকি?”

নো কমেন্ট, এটা ‘যাহার জন্য প্রযোজ্য’ টাইপ বক্তব্য, তবে ধরে নিচ্ছি এটা ডাক্তারদের বলা হয়নি, কারন ক্রাইম সীন প্রটেক্ট করা ডাক্তারদের দায়িত্বের মধ্যে পড়েনা।

“৬। পোস্টমর্টেম একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট যদি এত অযোগ্যই হন, তাইলে তাদের এই চাকরিতে রাখা হইছে ক্যানো? তারা নিজেরাই বা ক্যানো ইস্তফা দিতেছেন না? উন্নত দেশগুলিতে দ্বিতীয় পোস্টমর্টেম তখনই করা হয়, যখন কেইসের সায়েন্টেফিক অফিসারদের বা করোনারদের ভিকটিমের মৃত্যুর কারণ নিয়া একাধিক পরষ্পরবিরোধী বক্তব্য থাকে।“

প্রথমতঃ ইহা ‘উন্নত’ দেশ নয়, ইহা ‘বাংলাদেশ’, আর দ্বিতীয়তঃ বাংলাদেশে অনেক সময় লাশ উত্তোলন করে দ্বিতীয় পোস্ট মর্টেম কেন করা হয় সেটা আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আর কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট ঠিক কতখানি অযোগ্য আমি শিওর না তবে রেপ হয়নি এমন কেসেও রেপের আলামত খুজে পাবার মত যোগ্য যে নয়, সেটা পরিস্কার বুঝতে পারছি!

“৭। তনুর গোসল করাইয়া কবর দেওয়া লাশের দ্বিতীয় পোস্টমর্টেমে আপনি ট্রেইস এভিডেন্স কিছু পাবেন না এইটা পাগলেও বোঝেন। প্রক্রিয়াগত ভুল শোধরানোর জায়গা ‘১০ দিন পর’ দ্বিতীয় পোস্টমর্টেম না। এখন ‘ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় নি’ মন্তব্য কার জন্য করতেছেন? জনগণ আপনার মত ঘাস (এবং গাঞ্জা অর্থেও) খায় ভাবেন? আপনি কি আদৌ জানেন, শরীরে সেমিনাল কন্সটিটিউয়েন্টস পাওয়ার অর্থ সোজাসাপ্টা ধর্ষণ, সেই বিষয়ে সন্দেহ নাই, কিন্তু না পাওয়ার অর্থ ধর্ষণ ঘটে নাই, তা না? জানেন নাকি?”

মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন, দ্বিতীয় পোস্টমর্টেম বাংলাদেশে প্রায় সময় কি বা কেন তা আগেই বলা হয়েছে, উম, একটা প্রশ্ন ছিল, ‘প্রক্রিয়াগত ভুল শোধরানোর’ জন্য পোস্ট মর্টেম করা হচ্ছে, এটা কার বক্তব্য? তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেই যে ‘প্রক্রিয়াগত ভুল’ হয়েছে, সেটা ধরার সাধ্য কি তদন্তকারী সংস্থার আছে? সিরিয়াসলি স্পিকিং, তদন্তকারী সংস্থা ধরে ফেলতে পারবে এমন কোন ‘প্রক্রিয়াগত ভুল’ যদি ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার করে থাকেন এবং তা স্বীকারও করেন, তাহলে আপনাদের ধরতে হবে না, আমিই ধরে নিব সেই ডাক্তার ‘গাঞ্জা’ এবং সেই সাথে আরো অনেক কিছুই খান!

“তনুর বাবা মায়ের জন্য শুভকামনা থাকলো। তনু সহ ভবিষ্যতে আরো যারা ধর্ষিত হবেন, তাদের ও তাদের পরিবারের সবার জন্য শুভকামনা থাকলো। অসৎ প্রশাসনের দেশেও আপনি বাঁইচা থাকতে পারেন, অসৎ সরকারের ছায়াতেও আপনি টিকা থাকতে পারবেন, কিন্তু যেই দেশের ডাক্তাররা অসৎ, যেই দেশের বিজ্ঞানীরা অসৎ, সেই দেশে আপনি বাঁচতে পারবেন না। বাঁচার অবশ্য আপনার দরকারটাই বা কী? সরকার এবং সরকারের আর্মি বাঁইচা থাক, উনারা একলাই বাংলাদেশের সম্পত্তি ভাগ কইরা নিক, সুন্দরবন কাইটা হাডুডু খেলুক, চলেন, আমি আপনি লাফ দিয়া বুড়িগঙ্গায় কী বঙ্গোপসাগরে ডুইবা মরি। চলেন।“

নো কমেন্ট, ধর্ষনই যেখানে প্রমান হয়নি সেখানে অরক্ষিত এলাকায় আর কেউ না, আর্মিই ধর্ষন করে ফেলেছে। ওহে বাংলাদেশ আর্মি, তোমরা আর কি কি করে ফেলেছ হিসাব করে দেখতো, সাথে ‘সহ-আসামী’ হিসেবে আমার নাম শিগ্রী আসতে পারে কিনা!
কথা দিয়েছিলাম লেখার অসংগতি এবং ভুলগুলি তুলে ধরব, আই রেস্ট মাই কেস!

লিখেছেনঃ
কাজী ওয়াসিমুল হক (আইনি পরামর্শক, শেলটেক প্রাইভেট লিমিটেড)
কৃতজ্ঞতাঃ
১) ডাঃ কামদা প্রসাদ সাহা, বিভাগীয় প্রধান, ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ।
২) ডাঃ কাজী মাহবুবুল হক (এক্স লেকচারার, ফরেনসিক 
মেডিসিনজেড এইচ শিকদার মেডিক্যাল কলেজ)

৩) ডাঃ সালমা শিমু (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ)

Banaful:

View Comments (30)

  • এই মহিলা নাদিয়া ইসলাম এমন কোমর বেধে ডাক্তার এর পিছনে লাগলো কেনো?? মেডিকেল এ চান্স পায় নি বলে??

  • তাহলে তনু কিভাবে, কি কারণে মারা গেল? নিরপেক্ষ ভাবে মানবিকতার খাতিরে কেউ কি বলবেন? আপনার বোন বা মেয়ে হলে কি জানতে চাইতেন না?

  • তনু কিভাবে মারা গেলো তা বের করা ডাক্তার এর কাজ না, পুলিশের কাজ। যত দোষ সব ডাক্তার এর না

  • যে দুর্বল তাকে হেস্ত নেস্ত করা মানুষের প্রিয় খেলা, চিকিৎসক সমাজের অবস্থাও এমন। পুলিশকে কিছু বলার সাহস নাই, শুধু শুধু ডাক্তার এর উপর দোষ চাপানো সাংবাদিক আর উটকো ব্লগার দেরর অভ্যাস

  • চিকিৎসক দের ওপর দোষ চাপানো কোথায় দেখলেন? এখানে দায়িত্ব অবহেলা হয়নি আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন? আর কারও নামেএ শেষের ডিগ্রি তার অনেস্টি ও ভালমানুষি নিশ্চিত করে না। তনু হত্যা ও পোস্টমর্টেম এ যদি কোন চিকিৎসক চাপে পরে মিথ্যা রিপোর্ট দেয় তবে তার দায় কেন সব।চিকিৎসক নিবেন? তনু হত্যা কান্ড ও তার পরবর্তী ঘটনা প্রবাহ এটাই নিশ্চিত করে যে যা হচ্ছে তা অনেস্ট কোর্সে হচ্ছেনা।

  • অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে তনু মারা গেছে জ্বিনের আক্রমণে

    • ঠিক কিভাবে বললাম! একজন আর্মির নুন খাওয়া ব্রেইন ওয়াশড জুনিয়র ছোট ভাই তো আমাকে ভারতের দালাল বানিয়ে বললো এইটা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা 'র' এর কাজ, তারা নাকি বাংলাদেশ আর্মির 'ভাবমূর্তি ' নষ্ট করার জন্য তনুকে হত্যা করেছে...

    • আপনার সত্য কথা বলার সত সাহস আছে। স্যালুট আপনাকে। উনি যদি এইসব আজগুবি বিশ্বাস করেন আমাদের কিছু করার নাই। উনার কাল্পনিক থ্রিলার জগতে উনাকে থাকতে দিন। :)

  • আমরা ডাক্তার রা কি জন্য নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে পারি না কারণ আমাদের শত্রু আমরা নিজেরাই। আমাদের কোন ইউনিটি নাই। তনু হত্যার খুনি কেনো গ্রেফতার হচ্ছে না বা আসল রহস্য কেনো বের হচ্ছে না তাও ডাক্তার এর দোষে পরিণত কি আমরা নিজেরাই করছি না!!!! পোস্ট মরটেম কেউ একা করে না, ওখানে অনেক সাক্ষী থাকে, চিকিৎসক এর ভুল কিছু ডিসিশনস দেবার কোন অবকাশ নাই। খুনী বের করা যাদের কাজ তারা বের করুক। আমরা আগে কর্মস্থল এ আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করি। শেহজাদি আপু, ইভা, মেহনাজ দের জীবন বাচাই যারা আমাদের আশে পাশেই আছে। ঐটা ত হবে আমাদের দিয়ে নাকি!! ডাক্তার মরলে কেউ আসে না সবাই হাসে কসাই মরসে

    • শেহজাদি আপু কর্মস্থলে মারা গিয়েছিল বলে আমার জানা ছিল না, আমি তো অন্য কিছু জানতাম...

    • শেহজাদি আপু কর্মস্থল এ মারা যান নাই, আমিও জানি। আপা খুন হয়েছিলেন। কারণ তিনি একজন ডাক্তার ছিলেন আর বউ কেনো শিক্ষিত, এই অপরাধে তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আপনার ত অনেক সহপাঠিনী ছিল সবাই কি এমবিবিএস এর পর পড়তে পেরেছে?? যারা পড়তে পারেনি তারা কই?? খোজ নিয়েছেন কোন দিন?? আল্লাহ না করুক তাদের কেউ যদি নিউজ হয় পারবেন অত্যাচার এর প্রতিবাদ করতে??

    • শেহজাদি আপু জানি কার দ্বারা কোথায় খুন হয়েছিল? আর এখানের আলোচনার টপিক থেকে মোড় ঘুরে আগারে পাগারে না ঘোরাই ভাল। আর ডাক্তার হয়েছি বা হয়েছেন বলে এমন কিছু হয়ে যাইনি আমরা যে অন্য প্রফেশনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতে হবে

    • আগারে পাগারে যাচ্ছিনা আমি। আপুকে তার বর হত্যা করেছিলেন, ওইটাও কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট ই ছিল। থাকুন অহমিকা নিয়ে। ভবিষ্যৎ এ হয়ত কারো জন্য মানব বন্ধন এ আসবেন।

Related Post