X

ডেঙ্গু চিকিৎসায় অ্যালট্রোমবোপাগ ব্যবহারে আশাজনক ফলাফল দেখালেন বাংলাদেশের গবেষকরা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৪ নভেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ অনেক বেশি। প্রতি বছরই কমবেশি ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা যায়। এরই মধ্যে ডেঙ্গু চিকিৎসায় নতুন ধরণের একটি ওষুধ “অ্যালট্রোমবোপাগ” ব্যবহারের সাফল্য দেখতে পেয়েছেন বাংলাদেশি একদল গবেষক।

ছবিঃ প্রতীকী

আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিস ২০০৮ সালে অ্যালট্রোমবোপ্যাগ তৈরি করে যা আমেরিকার ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা FDA এর অনুমোদন লাভ করে ২০১৪ সালে। অন্যান্য ব্যাধি যেমন- লিভারের রোগে যখন প্লেটলেট কমে যায়, তখন এই ওষুধ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় এ ওষুধ আগে কখনও ব্যবহৃত হয় নি। চিকিৎসা বিষয়ক সাময়িকী দ্যা ল্যানসেট জার্নাল-এর ইক্লিনিক্যাল মেডিসিন-এ গত ২১শে নভেম্বর এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের ১২ জন গবেষক ও চিকিৎসকের প্রচেষ্টায় ১০১ জন ডেঙ্গু রোগীর ওপর অ্যালট্রোমবোপাগ ওষুধটি প্রয়োগ করে আশাব্যঞ্জক সাফল্যে দেখতে পান। ইনসেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের অর্থায়নে এই গবেষণাটি করা হয়। গবেষণায় ২৫ মিলিগ্রাম করে ওষুধটি স্বেচ্ছাসেবদের উপর প্রয়োগ করা হয়।

গবেষকদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সজীব চক্রবর্তী বলেন,

“ডেঙ্গু রোগের একটি অন্যতম উপসর্গ হলো এতে রক্তের প্লেটলেট কমে যায়। কিন্তু অ্যালট্রোমবোপ্যাগ নামের একটা ওষুধ রয়েছে যা রক্তের প্লেটলেট বাড়ায়, কিন্তু ডেঙ্গু রোগে এটি কখনোই ব্যবহার করা হয়নি। এই রোগের চিকিৎসায় সেটা কতটা কাজ করতে পারে, সেটা নিয়ে আমরা গবেষণা শুরু করি। সেখানে আমরা যে ফলাফল দেখতে পেয়েছি, তাতে যে ডেঙ্গু রোগীরা এই ওষুধটি খেয়েছেন, আট দিনের মাথায় তাদের প্রায় ৯২ শতাংশ রোগীর প্লেটলেটের সংখ্যা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলো। আর যাদের ওষুধটি দেয়া হয়নি, তাদের মধ্যে মাত্র ৫৫ শতাংশের সেটা ঠিক হয়েছিল। ফলে এতে বোঝা যায়, এই ওষুধটি দিলে বেশিরভাগ রোগী সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন।”

ছবিঃ প্রতীকী

তিনি আরও বলেন, ওষুধটির কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে কিনা, সেটাও আমরা দেখেছি। কারণ অনেকের প্লেটলেট বেড়ে গেলে সেটা ক্ষতির কারণও হতে পারে। অনেক সময় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। কিন্তু রোগীদের ক্ষেত্রে এই ওষুধে। এরকম কিছু পাইনি। শুধু তিন শতাংশের ক্ষেত্রে ডায়রিয়ার মতো কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পেয়েছি।

২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই গবেষণাটি করা হয়। তবে এখনো ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় এই ওষুধের ব্যবহার অনুমোদিত নয়। এটি ছিল দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি পরীক্ষা। তবে ডেঙ্গু রোগের উপর এই ওষুধের সাফল্যের বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করতে হলে একাধিক দেশে কয়েক হাজার মানুষের ওপর তৃতীয় ধাপের মানব পর্যায়ের পরীক্ষা করা জরুরি।  এখনো এটা ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইনে আসেনি। কিন্তু আমাদের মতো আরও বৃহৎ পরিসরে পরীক্ষা করে সফলতা পাওয়া গেলে তখন নিশ্চয়ই এটা ডেঙ্গুর চিকিৎসার গাইডলাইনে অন্তর্ভুক্ত হবে।

তথ্যসূত্রঃ বিবিসি

Silvia Mim:
Related Post