X

ডাক্তারদের জেনারেল ক্যাডারঃ FAQs !! বারংবার জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন !!

সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম আলোচিত বিষয় ডাক্তারদের জেনারেল ক্যাডারে যাওয়া । সেই বিষয়ের কিছু প্রশ্ন উত্তর দিচ্ছেন প্ল্যাটফর্ম এর একজন সিনিয়র মডারেটর ,ডাঃ তাহসিনা আফরিন, সহকারী সচিব,পররাষ্ট্র মন্রনালয় , ৩৩ বিসিএস।


১# জেনারেল ক্যাডারে গেলে প্র্যাকটিস/ পোস্ট গ্রাজুয়েশন করতে পারবো?!

উত্তরঃ নীতিগত ভাবে অফিস থেকে অনুমতি নিতে পারলে প্র্যাকটিসে কোন বাঁধা নেই। কিন্তু জয়েন করার আগ পর্যন্ত আমরা ডাক্তার’রা জানিই না যে জেনারেল ক্যাডাররাও ডাক্তারদের মত ২৪*৭ ঘণ্টা ডিউটিতে থাকেন। শুক্র- শনি- ঈদের দিন- নিজের গায়ে হলুদ – বিয়ের দিনেও আপনাকে অফিস করতে হতে পারে!! সরকারি কর্মকর্তা কেবল “নয়টা- পাঁচটা অফিস করে” – এটা মিথ!! এটা এখন সামরিক – কর্পোরেট- সিভিল, এই তিন রকম ওয়ার্কিং প্যাটার্নের একটা খিচুড়ি হয়ে আছে। সুতরাং, মোটামুটি হালকা প্র্যাকটিস করার জন্যও একটি নির্ধারিত সময়ে – নির্ধারিত দিনে চেম্বারে বসার যে সুযোগ দরকার, সেটা আপনি পাবেন না।
পোস্ট গ্রাজুয়েশনের জন্য শিক্ষা ছুটি পাবেন অনুর্ধ পাঁচ বছর, সেটা চাকরি স্থায়ী হবার পর, উর্ধতনের সদিচ্ছায়।এখন আপনি চাকরি করেন ফরেন ক্যাডারে, দুই বছর পর আপনার সব কলিগ পড়তে যাচ্ছে ‘ডিজঅ্যার্মামেন্ট’/ ‘পাবলিক ডিপ্লোম্যাসি’ কিংবা ‘ইন্টারন্যাশনাল ল’ নিয়ে!! আর আপনি পড়তে যাচ্ছেন, অনকোলজি!! বলেন, অফিস কাকে আগে অথবা সহজে শিক্ষা ছুটি দেবে?! কাকে এপ্রিশিয়েট করবে ফিরে আসার পর? উচ্চতর শিক্ষা শেষে কাকে ভালো পোস্টিং এ দেবে?!! সারা জীবন স্কুল কলেজে ভালো অবস্থানে থেকে কর্মক্ষেত্রে নিজের দৈন্য দশা আপনাকে সেদিন ফ্রাস্ট্রেশনে ফেলবে না?! তাই ওইসব চাকরিতে চলেই গেলে ‘অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার রাখার বিড়ম্বনা’ কেউই করে না। আম ছালা আমগাছ –সবই যায়!

২# আমার অর্জিত ডাক্তারি জ্ঞান কোন ভাবে কি কাজে লাগানো হবে?!

উত্তরঃ জি না, এবং জি না!! আপনি পালি-সংস্কৃত এর ছাত্র নাকি বুয়েটের নাকি আইবিএ … এটা আপনার উপর অর্পিত কাজের সাথে কোন ভাবেই লিঙ্ক করা হবে না। ডাক্তার বলে আপনাকে হেলথ সংক্রান্ত কাজে প্রথমেই ভাবা হবে – এটা অবান্তর!! কখনোই ভাবা হবে না। আপনি ডাক্তারি পড়েছেন, এতো ভালো ছাত্র আপনি, অফিসে আপনি হয়ত পাসপোর্টে সাইন মারার কাজ করছেন!! আপনি হয়ত ট্রাফিক সার্জেন্টদের কন্ট্রোল করছেন!! আপনি হয়ত ট্যাক্স দিবসে লোকের ট্যাক্স রিসিভ করে যাচ্ছেন!! জেনারেল ক্যাডার – আসলেই জেনারেল স্টোরের মত!! এখানে আপনার ব্যাক গ্রাউন্ড রসায়ন, ফিজিক্স, ভূগোল, মৃত্রিকা বিজ্ঞান, ফার্মেসি, মাইক্রবায়লজি, ইঞ্জিনিয়ারিং কিনা, কোন প্রভাব ফেলবে না। আই রিপিট, আপনি ডাক্তারি করার বা বিদ্যা কাজে লাগাবার .০০১% সুযোগও ৫৯ বছর বয়স অবধি চাকরি করা কালে পাবেন না।

৩# আমার স্যালারি নিশ্চয়ই ‘হেলথ’ থেকে ভালো হবে?!

উত্তরঃ এই প্রশ্নের উত্তর দুটি।
প্রথমত, আপনি সরকারি বেতন স্কেলে সরকারি বেতন ভাতা পাবেন। এটা সক্কলের জন্য সমান। ক্যাডার অনুযায়ী গাড়ী – বাড়ির সুবিধা থাকলে পাবেন। ( যেমনঃ ইউএনও যে বয়সে সার্বক্ষনিক গাড়ী বাড়ি পায়, ফরেন অফিসার শুধু অফিসে যাবার – আসার গাড়ীর সার্ভিস পান!! সচিব যে বয়সে সরকারি গাড়ী পান, রাষ্ট্রদূত সে বয়সে মার্সিডিজ কিনতে পারেন! ইত্যাদি!!) … এর বাইরে আপনার আর কোন ‘হালাল’ ইনকাম নেই!! একদম আগুল গোনা বেতনের টাকা!!
একজন সৎ এডমিন ক্যাডার, ফরেন ক্যাডার, পুলিশ ক্যাডার প্রথম জীবনে আল্লাহ্‌র দুনিয়ায় ৩৬৫ দিনই অফিসে সার্ভিস দিয়ে মাসে মাত্র চল্লিশ হাজার টাকা বেতন নিয়ে, না খেয়ে মরেও যেতে পারেন!! কারো কিচ্ছু আসে যায় না!!
দ্বিতীয়ত, আপনি সচিব যে বয়সে হবেন, আপনার বন্ধু সেদিন মেডিসিনের প্রফেসর। খুব নাম ডাক না হলেও তার আয় লাখ তিনেক। আপনার?! ওই গাড়ী, সরকারি বাড়ি, হাবিজাবি সব সৎ সুবিধা মিলিয়ে কত?!! দেড় লাখের বেশী না।
এম্ব্যাসাডর যে বয়সে হবেন, মানে গড়পড়তা ৪৮- ৫০ বছর বয়সে, আপনার বেতন তখন ৪ হাজার মার্কিন ডলার। আর ইউএসএমএলই দিয়ে ত্রিশ বছর বয়সী যে বন্ধু রেসিডেন্সিতে ঢুকেছে, তাকে জিজ্ঞেস করেন আজই তার স্যালারি কত?! সাড়ে তিন থেকে চার হাজার মার্কিন ডলার!! মানে ওই এম্ব্যাসাডরের বয়সে তার টাকা গোনার জন্য লোক রাখা লাগবে!! এবার বুঝে নেন, ইনকামের খাতিরে জেনারেল ক্যাডার টেকনিক্যালের চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় নেই।

৪# আমার টাকা লাগবে না, আমার ‘সম্মান’ চাই!! প্রমোশন চাই!!

উত্তরঃ হ্যাঁ। এইটা জেনারেল ক্যাডারে আছে বৈকি। ঠিক সময়ে প্রমোশন, ব্যলান্স করে পোস্টিং আর অন্যোন্য সুবিধা পাবার নিয়ম আছে। কিন্তু কাজির গরু, যদি আপনার গোয়ালে না থাকে – বুঝে নেনে দেশের কোন গোয়ালেও নেই!! পাঁচ বছর অন্তর অন্তর একসময় এখানেও কে গোপালি – আর কে বোগরার ছাওয়াল, সেটা গোনা হত!! এখনো তেল আর ঘিয়ের তোড়ে এখানে দুধ আর মাঠার দাম সমান!! কাজে ঠনঠন কিন্তু কথায় ভনভনদের জয়জয়কার!! এখানেও আপনার স্ত্রী কোন ডিসি ভাবি’র বিরাগ ভাজন হয়েছেন বলে আপনার প্রমোশন আটকে যেতে পারে!! মন্ত্রির শালাকে প্রটোকল দিতে ভুল হল বলে ফরেন পোস্টিং থেকে ডেকে নিয়ে আসতে পারে চরম অপমান করে। এক সরকারের বিরোধী নেতাকে হালকা ডলা দিয়েছেন বলে, অন্য সরকারের সময় লাশ হয়ে পড়ে থাকতে পারেন পুলিশি উর্দিতেই!!
জি স্যার!! ইয়েস স্যার!! এর বাইরে আর কিছু বলতে শোনেন সরকারি কর্মকর্তাকে?!! খারাপ লাগার কিছু নাই, এটাই এতো বড় সার্ভিসকে চেইন অব কমান্ডে বেঁধে রাখার একমাত্র উপায়। শুধু ভাবেন, আপনার চিত্ত এখন ভয় শুন্য – উচ্চ সদা শির!! আপনি পারবেন, ওই তথাকথিত ‘সম্মান’ ধারন করতে?! প্রাপ্র্য প্রমোশন সঠিক সময়েই আদায় করে নিতে?! ভাবুন তাহলে হেলথ এর বৈষম্য নিয়ে ভাবার আগে, বৈষম্য কোথায় নেই এদেশে?!!

৫# আমার ভাল্লাগেনা!! হেলথ এর পড়াশোনা – এত সীমাবদ্ধতা সহ্য হয়না!!

উত্তরঃ দুঃখ জনক হলেও সত্যি আমরা ডাক্তার’রা ডাক্তারি ছাড়া আর কিছুই জানি না!! ছোটবেলা থেকে মুখ গুজে পড়াশোনা করতাম, ফ্রন্ট লাইন রাজনীতি করি নি, সাইড বিজনেসে টেন্ডারবাজি করি নি, জ্ঞাতি গুষ্টি চিনি না, বৈচিত্র্যময় নেটওয়ার্ক ধরে রাখতে পারি না, দেশকে চিনি না, দেশের মানুষের সাইকি বুঝি না … আমাদের পক্ষে তাঁদের ‘প্রশাসক’ হওয়া একটু কঠিন কাজ হয় , যতটা সহজ হয় স্কুলের দ্বিতীয় সারির সে বন্ধুর যে ভার্সিটি থেকে ইংলিশে অনার্স পড়ে জেনারেল ক্যাডারে আসে!!

তাই এখানে এসে আমাদের আসলেই অনেক লেখাপড়া- জানা শোনা করতে হয় যদি তাঁদের সাথে পাল্লা দিতে হয়। এবং এসব পড়াশোনা সায়েন্সের (২+২=৪) না, এসব পড়াশোনা মানে (২+২= অনেক কিছু হইতে পারে)!! মানবিক, ব্যবসা, অর্থনিতি, সমাজ বিজ্ঞান … এসব পড়াশোনা করা লাগবে। এসবে বৈদেশিক মাস্টার্স করা লাগবে স্যার হিসেবে উচ্চ সম্মান পেতে হলে। একেক জন ‘সচিব স্যার’ দেশের জন্য কতটা করেন, সেটা আপনি আমি নাই দাম দেই। কিন্তু উনারা কি পরিমাণ জানেন, নলেজ রাখেন, সেটা কাছে থেকে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না। পড়ালেখা করবেন না তো আপনাকে দুইদিনেই যোগ্যস্থান থেকে কিক আউট করে দেবে!! আপ টু ডেট থাকা লাগবেই যদি ইজ্জতে থাকতে চান। তাই পড়ার ভয়ে ‘হেলথ’ ছাড়ার কারণ নাই!!
আর সীমাবদ্ধতা!? ভাই ডি, এই দেশটা এখনো একটা ‘উন্নয়নশীল গরীব’ দেশ!! এখানে সব সেক্টরে সম্পদের অপ্রতুলতা। পুলিশ কাজ করে অর্ধেক কন্সটেবল নিয়ে, ফরেন অফিসার কাজ করে অর্ধেক সহকারী নিয়ে, আমলা কাজ করে অর্ধেক কামলা নিয়ে। সবাই কোন রকমে গোঁজামিল দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এর উপর আছে ‘উর্ধতনের আজ্ঞা’!! যেটা আপনার নাই অন্তত! আপনার প্রফেসর কোনদিন চার্জ করবে না, অমুক দল করা হাইপো ভলিউমিয়ার সে রোগীকে কেন ফ্লুইড দিলে?!! কিন্তু আপনার আমলা অর্ডার দিতে পারে, সক্কল অমুক দলেরে পিডা!! তমুক দলেরে পাসপোর্ট দিবি না!! চোখের সামনে দেশের স্বার্থ পরদেশে বিক্রি হইতে দেখতে পারেন, কিচ্ছু কবার নাই!!
হেলথ এ আপনি যদি দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন, তবে রাউন্ড দেবার জন্য দাঁড়িয়ে থাকলেন। কারো প্রটোকল দেবার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকলেন না! হেলথ এ যদি অভুক্ত থাকলেন কোন বেলায় তবে রোগীর চাপে খাবার সময় পান নি বলে অভুক্ত থাকলেন, ডিসি স্যার তখনো খান নি বলে আপনিও খেতে পারেন নি – এমন না!! ডাক্তারি করতে প্রফেসর যতই খাটাশ হোক, রোগী মারতে বলবে না!! বইয়ের বাইরে কিছু করার নির্দেশ দেবে না। রাতে বাড়ি ফিরে শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন, আজকে একটা রোগী বাঁচাই আসছেন। এলাকার প্রশাসনিক কন্ট্রোল ধরে রাখতে কাউকে বিনা বিচারে ক্রস ফায়ার করেন নাই!!

৬# লেখাপড়া সমস্যা না। সমস্যা হল সমাজে ডাক্তার এর ইজ্জত দেয় না কেউ এখন!!

উত্তরঃ আপনার সমাজ কারে ইজ্জত দেয় বলেন?! আমলা শুনলেই ধরে নেয় ঘুষখোর, পুলিশ শুনলেই খুনি, কাস্টমস অফিসার মানেই পার্সেন্টেজ ইনকাম, ট্যাক্স ক্যাডার মানেই দুর্নিতিবাজ, ইঞ্জিনিয়ার ক্যাডার মানেই কন্ট্রাক্টর এর শ্যালক, সাংবাদিক মানেই জুয়ারি, মিডিয়া কর্মি মানেই পতিতা, কর্পোরেট মানেই রক্তচোষা, এবং এই ধারাবাহিকতায় ডাক্তার মানেই কসাই!! এক অদ্ভুত বে-ইজ্জতের সমাজে বাস আমাদের। কোনো পেশাজীবীই তার যোগ্য সম্মান পাচ্ছেন না। যেন কোন সার্ভিসই দেশের আপ্টুদি মার্ক না। পাসপোর্ট অফিসে যান, ভুমি অফিসে যান, এম্ব্যাসিতে যান, আইন আদালতে যান, পুলিশ স্টেশনে যান, কর অফিসে যান … কি মনে হয়? সবাই নষ্ট মনে হয় না?! তাহলে হেলথ কিই বা অসম্মান দিল আপনাকে যে কোন সম্মানের জন্য জেনারেল এ যাবেন?!

৭# সেটা না। মেধাবীরা পড়ে পড়ে মার খাবে কেন?! জেনারেল ক্যাডার আমরাই ‘দখল’ করবো?!!

উত্তরঃ ভাই ডি! কি ‘দখল’ করবেন?! এইটা কি চর, যে দখল করবেন?! আপনি পরিক্ষায় বসলে ভার্সিটি উইড়া যাইবো, এই কথা যদি বলেন তাহলে দুইটা কথা আছে আমার!!
এক, তাদের ম্যাট্রিক ইন্টারে উড়াইয়াই ডাক্তারিতে আসছেন, আবার নতুন করে উড়াইয়া সময় নষ্ট করা কেন?!
দুই, তারা এহন অনেক সেয়ানা!! চার পাঁচ বছর ধরে ‘বিসিএস’ পড়ে ভার্সিটিতে। আপনার জন্য যা ‘লাক বাই চান্স’ তার জন্য সেটা ‘জীবনের যুদ্ধ!’। বেলা বোসের বিয়ে ঠেকানোর জন্য সে উড়াইয়া কোচিং করে, ধুমাইয়া পড়ে, সব টেকনিক খাটায় ক্যাডার নিশ্চিত করার জন্য; মেধায় আপনার সমকক্ষ হোক নাই হোক!! তারে হেইয়ো বইলা ‘দখল’ কইরা ফেলা – অত্ত সোজা না!! তাই দখলের চিন্তা না করাই ভালো। বরং সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকুক। এবার বাকিটা আল্লাহ্‌ ভরসা!!
আর সেই সাথে, কি হবে ‘এত্ত মেধাবীরা’ এই মিডিওকার জবে এসে?! এটা সিভিল সার্ভিস, রকেট সায়েন্স না! রিসার্চ প্রোজেক্ট না। এখানে মেধার স্থান কই, স্বীকৃতি কই?! সারাদিন বসের হুকুম তামিল – এর বাইরে কি আছে করার?!! কতটা আছে করার?!

৮# বাহ! তাইলে আপনে যে “পলায়া” জেনারেলে গেলেন!! অমুকে গেলো! তমুকেও গেলো!!?

উত্তরঃ ভাইয়া! আমার আর আপনার হিসাব কি এক?! আপনার আর তার হিসাব কি এক?!
আমি ঢাকায় স্থায়ী হওয়া বাসিন্দা, জেলায় জেলায় পোস্টিং এর চাইতে ঢাকায় একটা সম্মানজনক চাকরি পেলে তো মারহাবা!! দেশে বিদেশে ঘুরতে ভালবাসি, সরকারি চাকরি নিয়া গেলে তো আরও ভালো!! এদিকে বিত্তবান জামাইএর উপর চলি, সাজি গুজি – স্টাইল মেরে অফিসে যাই – প্রটোকল করি – ফরেন ক্যাডারের ভাব নেই। আমার পেছনে ভালো রেজাল্ট আছে- একটা পার্ট ওয়ান আছে, দেড় বছরের ট্রেনিং আছে , ফিরে আসলেও সেট হইতে দুইদিন লাগবে না!! আমার সরকারি চাকরির গোনা টাকায় কেউ নির্ভর না, আমার ভুত ভবিষ্যৎ ভালো হোক – খারাপ হোক , কারো কিচ্ছু আসে যায় না। জেনারেলে বিসিএস দিলাম, হেসে খেলে হয়ে গেলো, তাই দেখতে চলে আসলাম কি হয় এখানে … আমারে দিয়া বিচার করলে হপে?!! আমার সিধান্ত কেন নিলাম, সেটা কি অন্যের সাথে মিলবে?! আপনার সিদ্ধান্ত কেবলই আপনার পারিপার্শিক থেকে নিতে হবে। কারো দেখা দেখি না। মানুষ গাছে তুলে মই কেড়ে নেয়!! আমিও তাই নেবো!! তবে আমার হিসাব আপনার হিসাব এক হইলে কোন কথা নাই!!

কিন্তু এক না হইলে দুই খান কথাঃ

প্রথমত, পাস করে অনারারি করেছি, স্কয়ার হাস্পাতালে আরএমও ছিলাম, সরকারি চাকরি করেছি নয় মাস, এখন জেনারেল ক্যাডারে আছি প্রায় তিন বছর। সব ঘাট দেখে এসেছি!! অন্য ২৪ ক্যাডারের ৩৬০ জন অফিসারের সাথে ছয় মাস ট্রেনিং করেছি। তাদের সবার অভিজ্ঞতার আলোকে বলি … পৃথিবীতে নাই কোন বিশুদ্ধ চাকরি!! তাই হেলথ এর উপর হতাশা নিয়ে হেলথ ছাড়বেন না। তাহলে সেখানেও হতাশ হবেন। বরং সন্তুষ্টি তৈরি করে এরপর ছাড়বেন। সরকারি ডাক্তারিতে না পোষালে বেসরকারি করে দেখেন। বেসরকারিতেও সমস্যা হলে গভীর ভাবে ভাবেন সমস্যা আপনারই কিনা। এরপরও জেনারেল ক্যাডারের প্রতি তীব্র প্যাশন থাকলে তখন ‘মেডিক্যাল’ ছাড়বেন। জানেন তো, মেডিক্যাল ছাত্ররা প্রফের হতাশ সময়ে যেসব প্রেমে পড়ে, সেগুলো বেশির ভাগই গোল্লায় যায়!! তাই সদানন্দ সময়ে – স্থির চিত্তে ভেবে দেখবেন, আসল উত্তর পাবেন।
দ্বিতীয়ত, মানুষ বদলায়! কারনে অকারনে বদলায়!! এই আমি ছোটবেলায় চেয়েছিলাম কর্পোরেট জব করবো, বড় বেলায় ডাক্তার হলাম। পেডিয়াট্রিশান হয়েই যাবো, এমন সময় স্কিনে নজর দিলাম! স্কিনে চলেই যাবো এমন সময় অনকোলজির নাম শুনে লাফিয়ে উঠলাম। অনকোলজি থেকে একবার ট্রান্সফিউশন মেডিসিনেও যেতে চেয়েছি, প্যালিয়াটিভে যেতে চেয়েছি …!! অথচ, আমি এখন কই এসেছি?!!
দুই বছর পর কই থাকবো?! জানি না!! আজকে যা আঁকড়ে ধরে আছি, কাল সেটা অর্থহিন লাগবে না, কে বলতে পারে?!! টেকনিক্যাল ক্যাডারের ব্যাকগ্রাউন্ড চেঞ্জ করা কোন হুজুগে সিদ্ধান্ত না, আল্লাহ্‌র দোহাই!

…………………

ডাঃ তাহসিনা আফরিন
৪৬ সিএমসি, ২০০৩-২০০৪ সেশন
সহকারী সচিব (পররাষ্ট্র ক্যাডার), ৩৩ বিসিএস

drferdous:

View Comments (2)

  • আমরা বাঙ্গালী জাতি আসলেই হুজুগে জাতি।
    তার উপর কোনোটাতেই satisfaction পাই না-
    ভাবি সেই হয়তো বেশি সুখী-
    "নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস
    ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস "।

    এ যাবত পড়া সেরা লেখাগুলোর মধ্যে একটা। ?

Related Post