X

ছোট হয়ে গেল পৃথিবী : ডা. রাশিদা বেগম

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৭ জুলাই, ২০২০, মঙ্গলবার

ডা. রাশিদা বেগম
অবস এন্ড গাইনী এন্ড ইনফার্টিলিটি স্পেশালিষ্ট

এক সময়কার উড়োজাহাজের স্লোগান ছিল, “ছোট হয়ে আসছে পৃথিবী”। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে আর ছোট হয়ে আসছে না, ছোট হয়েই গেল পৃথিবী।

২০১১ সালে সুইডেনে গেলাম ESHRE কনফারেন্সে। সেনজেন ভিসায় যতটা জায়গায় যাওয়া যায়, তার চেষ্টা চলে। সাথে তাই নরওয়ে এবং ডেনমার্ককে পরিকল্পনায় রাখলাম। ডেনমার্কে ছোটবেলার বান্ধবীর উম্মে নাসিমা বেগমের ছোট ভাইয়ের বাসায় থাকব। বান্ধবী অনুরোধ করল ছেলেকে সরিষা ইলিশ রেঁধে খাওয়াই যেন। বাংলাদেশী ইলিশ যা এখানে সচরাচর চোখে দেখা যায় না, সেই এক্সপোর্ট কোয়ালিটি ইলিশ নিয়ে এল ছোট ভাই। আর সরিষার পেস্ট। আমি আস্ত সরিষা চাইলাম, কারণ পেস্ট দিয়ে মজা হবে না। গ্রাইন্ডিং মেশিনে সরিষা শুধু ঘুরে ঘুরে পিছলিয়ে যায়। তার কানা কড়িও মেশিন স্পর্শ করতে পারছে না। তাই ভিজিয়ে রাখলাম। তারপর হামান দিস্তায় আধা পেষা করে বাকীটুকু মেশিনে। এইবার মেশিন না ছুঁয়ে যাবে কোথায়। ব্রিগেডিয়ার মামুন মোস্তাফী আমার বান্ধবীর আর এক ভাইয়ের ফ্রেন্ড, ফ্যামিলি ট্যুরে তখন ডেনমার্কে। সবাই ঘুরে ফিরে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেশের সরিষা ইলিশ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা।

আমি এখন ভার্চুয়াল ডেনমার্কে। ডেনমার্ক থেকে মালমো, সুইডেন যাবার পথে যে ব্রীজটি নদীর ঠিক মধ্যখানে নদীর ভিতরে ঢুকে যায় সেটি দেখার জন্য আবার সুইডেন ঢুকলাম। কিন্তু শোভাযাত্রার যাত্রীর মত বাইরে থেকে সৌন্দর্য বোঝা গেলেও ট্রেনের ভিতরে বসে কিছুই টের পেলাম না। যেতে পারি নি নরওয়ের নিশীথ সূর্যের সেই জায়গাতেও।

এবারে প্ল্যান ছিল জাহাজে ভেসে ট্রেনটি মাঝনদীতে ব্রীজ থেকে কিভাবে নদীর পেটে ঢুকে যায় তাই দেখবো। আর ২৪ ঘন্টাই যেখানে দিন পৃথিবীর সেই কর্নারেও যাব।

ESHRE থেমে থাকে নি। তার পূর্ণ অবয়ব নিয়ে এবারেও এল। ১০৬৭৩ জন অংশগ্রহণকারী। করোনার সারা পৃথিবী দখলই বলে দিচ্ছে পৃথিবী কত ছোট হয়ে গেছে। ছোট (সংকীর্ণ) হয়ে গেছে চলাফেরা, খাওয়া দাওয়া, আনন্দ উৎসব – সব। আজ হোম ডেলিভারীতে সব দোকানীরা অভ্যস্ত। কনফারেন্সেরও আজ হোম ডেলিভারী। আর যাওয়া হলো না পৃথিবীর সেই কোণাটাতে যেখানে কোন আঁধার নেই। দেখা হলো না নরওয়ের বিখ্যাত অরোরা বা নর্দার্ন লাইট।

দুপুর ১টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত কনফারেন্স। আছে টি ব্রেক, লাঞ্চ ব্রেক। বাদ যায়নি কোম্পানী সিম্পোজিয়ামও। ইউরোপ আমেরিকার কনফারেন্সগুলোর জ্ঞানসমৃদ্ধতার চোটে খাওয়া দাওয়া বড়ই বেরসিক। বলতে গেলে না খেয়েই থাকতে হয়। এত বছর ধরে ESHRE কনফারেন্স অংশগ্রহণ করলাম, আজ এই প্রথম একটা মনের মত লাঞ্চ পেলাম।

Fahmida Hoque Miti:
Related Post