X

চিকিৎসকদের সামাজিক উদ্যোগ

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৪ মে ২০২০, বৃহস্পতিবার:

“মহামারী এক যুদ্ধের সম্মুখে এখন আমরা দাঁড়িয়ে। কেউ আজ গৃহবন্দী। কর্মব্যস্ত শহরটা আজ নিথর হয়ে আছে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো কর্ম হারিয়ে অতি কষ্টে কারো মুখপানে হয়তো চেয়ে আছে একবেলা খেয়ে বাঁচার আশায়। পৃথিবী যখন নিস্তব্ধ, করোনার ছোবলে আক্রান্ত মানুষগুলো যখন ঘরছাড়া, স্বজনহারা হয়ে হসপিটালের শূন্য বেডে একাকিত্বে হয় মৃত্যু না হয় এ যাত্রায় বেঁচে যাওয়ার প্রহর গুনছে, কেউ আছেন তখনও- দাঁড়িয়েছেন মানুষের পাশে। বুকভরে সম্মান জানাই আমাদের সুপারহিরোদের, তারা হলেন আমাদের ডাক্তার, নার্স, আমাদের পুলিশ ভাই, ডেলিভারীম্যান, পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রমুখ। দেশের হয়ে অনেক দায়িত্ব মাথায় নেয়াটা আমাদের গুরুদায়িত্ব হয়ে পড়ে। বিবেককে বোঝানো বড় দায়। বিবেকের তাড়না থেকেই HEALTH MANAGEMENT BD FOUNDATION (HMBD) এর পক্ষ থেকে করোনার এই দুর্দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আমাদের এক ছোট্ট প্রচেষ্টাকে আজ তুলে ধরতে চাই। লোক দেখানো নয়, আজ আমাদেরটা দেখে কেউ যদি উৎসাহ পেয়ে আরেকটি ভালো কাজের সুযোগ পায়।”

সমমনা উদ্যোক্তাদের মধ্যে আছেন নির্বাহী পরিচালক ডা. তাইফুর রহমান, ডিরেক্টর অপারেশনস ডা. আহমেদ জুবাইর মাহদী, সদস্য ডা. মাখলুকুল মিজান, ডা. রিফাত হাসান বাপ্পি প্রমুখ।

করোনা দুর্যোগে বিপর্যস্ত ঢাকার উত্তরায় ফাউন্ডেশনটি বেশ কিছু প্রজেক্ট হাতে নেয়।

১. বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে ‘HAND WASH SET’/‘হাত ধোয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী’ স্থাপন করার পরিকল্পনা করে এবং উত্তরা ও আশেপাশের এলাকাগুলোতে হ্যান্ড ওয়াশ সেট স্থাপন করে। হাত ধোয়ায় সচেতনতা বৃদ্ধিতে তাঁরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন।

২. করোনা সংক্রমণে ‘লকড ডাউন’ পরিস্থিতিতে দেখা দেয় খাদ্য সংকট। তাঁরা শুরু করেন ‘EMERGENCY FOOD SUPPLY’ প্রজেক্ট। চাল, ডাল, পেঁয়াজ, তেল, লবণ, চিনি, আলু ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য বিতরণ করা হয়েছে উত্তরা, টংগী, আব্দুল্লাহপুর বস্তিতে, সাভার, মানিকগঞ্জ জেলার কিছু স্থানে।

৩. করোনা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা/COMMUNITY CLEANING. জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটিয়ে, সচেতনতা তৈরি করে করোনা ভাইরাস থেকে নিজেদের সুরক্ষা দিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

৪. দরিদ্র শিশুদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়।

৫. একটি গুরুত্বপূর্ন প্রজেক্ট করা হয় রোহিঙ্গা ক্যাম্প এ। ‘স্যোস্যাল ডিসট্যান্সিং’ ও ‘আইসোলেশন’ সম্বন্ধে সচেতনতা তৈরি করে তা মেনে চলার জন্য আহ্বান করা হয়। জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হয়। বিভিন্ন অরগানাইজেশনের কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে পিপিই বিতরণ করা হয়।

৬. করোনা যুদ্ধে আমাদের ফ্রন্টলাইন যোদ্ধারা আছেন অসহায় অবস্থায়। পরিবার থেকে দূরে, সন্তান হতে দূরে, বাড়িতেও থাকতে হচ্ছে কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে। পিপিই পরে ৮ ঘণ্টা-১২ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছেন একটানা। বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের মাঝে পিপিই বিতরণ করা হয়। পিপিই-তে অন্তর্ভুক্ত ছিল গ্লভস, গগলস, মাস্ক, এপ্রোন, ফুট কভার, ফেস শিল্ড। ইতিমধ্যে বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ আরও বেশ কয়েকটি জেলার হাসপাতালে প্রায় ৪৫০ টি পিপিই বিতরণ করেছেন। পিপিই দিয়ে সহযোগিতায় অংশীদার ছিলেন ফাইজা রহমান, ডা. সানজিদা, কাজী ফুয়াদ, মোস্তফা জুহায়ির এবং আরো কয়েকজন। এছাড়া ফ্রন্ট লাইনারদের মাঝে রান্না করা খাবার বিতরণও করা হয়।

৭. দুর্দিনের সময়েও কিছু মানুষ আছেন ঘরে অন্ন নেই তবুও মুখ ফুটে চাওয়াটা তাঁদের ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না। ‘GENERAL GROCERY PACK DISTRIBUTION’ সেই সকল মানুষের জন্য। স্যোস্যাল ডিসটেন্সিং মেইনটেইন করে গ্রোসারী প্যাক বিতরণ করা হয় তাঁদের বাড়ি বাড়ি। রমজানের পবিত্র মাসটিতে সবার ঘরে ঠিকমত সাহরী ও ইফতারের আয়োজন করার লক্ষ্যে ৩৩ কেজি খাদ্যসামগ্রী যেমন- চাল, ডাল, আলু, মুড়ি, তেল, লবণ, পেঁয়াজ, চিনি দিয়ে গ্রোসারী প্যাকটি সাজানো হয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকার মিরপুর, আদাবর, দিয়াবাড়ি, বিহারী ক্যাম্প, গাবতলী, টঙ্গী, নতুনবাজার, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, রায়েরবাজার বস্তি, নিকুঞ্জ ইত্যাদি স্থানে বিতরণ করা হয়েছে। নারায়নগঞ্জের নবীগঞ্জের কদম রসুল অঞ্চলে ৬৫ টি পরিবারের মাঝে, টংগী, আব্দুল্লাপুরের বস্তি বাসীদের মাঝে ২০০ এর মত প্যাকেট বিতরণ করা হয়।

সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ ‘STAY HOME AND WE WILL PROVIDE YOU WILL ALL NECESSITIES’

৮. গাবতলী বাস স্ট্যান্ড, দেশের অন্যতম ব্যস্ত এলাকাটি এখন নিস্তব্ধ। সেই সাথে নিস্তব্ধ হয়ে রয়েছে সেখানে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলোর জীবনও। এই মানুষগুলোকে খাওয়ানোর জন্য তাঁরা রান্না করা খাবার বিতরণ করেন।

৯. রমজান উপলক্ষ্যে দরিদ্র, পীড়িত মানুষের মাঝে রান্না করা ইফতার বিতরণ করা করা হয়। স্যোস্যাল ডিসটেন্সিং মেনে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ প্যাক ইফতার বিতরণ করা হয়।

১০. করোনা বিষয়ে ঘরে বসে স্বাস্থ্যসেবা পেতে টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়েছে। ডাক্তারের একটি টিম প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা শিফটে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

১১. কৃষিপ্রধান দেশে আজ কৃষকেরাও দিন পার করছেন দুঃসময়ের মধ্যে দিয়ে। ফাতিহা পলিন ও জারিন তাসনিম এর একটি টিমের সমন্বয়ে তাঁরা কৃষকদের কাছ হতে ন্যায্যমূল্যে ধান, কুমড়া, টমেটো, শসা, লাউ, লেবু, মিষ্টি আলু, আনারস, তরমুজ ইত্যাদি কিনে নেন এবং দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করেন।

সমাজের নানা স্তরের মানুষের মাঝে যোগাযোগের মাধ্যমে সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষের সহযোগিতা সুষ্ঠু উপায়ে সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে সামাজিক সুরক্ষায় এই ফাউন্ডেশন অবদান রেখে চলেছে।

করোনার প্রত্যক্ষ পরোক্ষ আঘাত থেকে সমাজ ও দেশকে রক্ষা করতে এ ধরনের উদ্যোগ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সরকারি বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ে করোনার প্রভাব সামলাতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ, এটাই প্রত্যাশা।

তথ্যসূত্র: হেলথ ম্যানেজমেন্ট বিডি ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেইজ

নিউজডেস্ক

Abdullah Al Maruf:
Related Post