X

চিকিৎসকদের প্রণোদনা: সরকারি-বেসরকারি বিভাজন?

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৫ এপ্রিল ২০২০, শনিবার:

গত ২৩ এপ্রিল ২০২০ (বৃহস্পতিবার) বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ (অনুবিভাগ-১, অধিশাখা-৪) এ নভেল করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের সেবা প্রদানে সরাসরি কর্মরত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ এ সংক্রান্ত সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারী দায়িত্ব পালনকালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে, তার ক্ষতিপূরণ সরকার প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি পরিপত্র জারি করা হয়।

পরিপত্রে বলা হয়, যেসব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীদের সরাসরি সেবা দেবেন, তারা করোনাভাইরাস পজিটিভ হলে সরকারি বিধি অনুযায়ী গ্রেড-ভিত্তিতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা পাবেন।

প্রণোদনার প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রকাশের পর থেকেই চিকিৎসক সমাজে সমালোচিত হচ্ছে উক্ত ঘোষণা। কারণ, সরকারি চাকরিরত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কথা থাকলেও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে সেবাদানকারীদের কোন উল্লেখ উক্ত পরিপত্রে নেই।

করোনা সংকটের শুরু থেকেই বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত সব চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে এই মহামারি প্রতিরোধ ও প্রতিকারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দেশে মোট ডাক্তারদের মধ্যে মাত্র ১২.২% ডাক্তার কোভিড -১৯ এর চিকিৎসাসেবা দানে সরকারিভাবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।

শিল্পী: সূত্র চাকমা

অথচ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত আড়াইশজনের বেশি চিকিৎসক-নার্স এবং দেড়শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা দানকারীই রয়েছেন। এর মধ্যে বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগ, অন্তঃবিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ ও ফিভার ক্লিনিকে দায়িত্ব পালন করা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যাই বেশি। অর্থাৎ, কোভিড-১৯ ডেটিকেটেড হাসপাতালের বাইরে কর্মরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাই বেশি আক্রান্ত হয়েছেন, যেহেতু তারা যথাযথ সুরক্ষা ছাড়াই অসনাক্ত রোগীদের কাছে যাচ্ছেন বেশি।

উক্ত প্রণোদনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মত প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন ডাক্তারগণ।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের এক সাবেক শিক্ষার্থী বলেছেন, “কেন এই বিভাজন? করোনা রোগীর চিকিৎসা করে করোনায় আক্রান্ত হলে কোন ক্ষতিপূরণ কিংবা প্রণোদনা যদি বেসরকারি চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাওয়ার অধিকার না থাকে, তাহলে তাদের কাছ থেকে করোনা রোগীর চিকিৎসা রাষ্ট্র কিভাবে আশা করে? বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি কিংবা প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখার ব্যাপারে হুকুমজারি কিভাবে করে?”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিকিৎসক বলেছেন, “সরাসরি করোনা রোগীর চিকিৎসা হয় শুধু করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে। তার মানে-
১. অন্য প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা দিতে গিয়ে করোনা রোগীর থেকে করোনা আক্রান্ত হলে কেউ এই প্রণোদনা পাবেন না।
২. সরকারি স্বাস্থ্য কর্মী (ডাক্তার-নার্স-স্যাকমো-ওয়ার্ড বয়-আয়া-এম এল এস এস) যারা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ছাড়া অন্য সরকারি হাসপাতালে (উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স, সদর হাসপাতাল,মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) কাজ করতে গিয়ে করোনা রোগীর থেকে করোনা আক্রান্ত হবেন, তারা এই প্রণোদনা পাবেন না।
৩. সরকারি ডাক্তার ছাড়াও অন্যান্য ডাক্তার (এম এস-এম ডি-ডিপ্লোমা রেসিডেন্ট,অনারারি মেডিকেল অফিসার, এফ সি পি এস ট্রেইনি,ইন্টার্ন ডাক্তার) যারা সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউট গুলোতে কাজ করেন তারা যদি চিকিৎসা দিতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগী সংস্পর্শে এসে করোনা আক্রান্ত হন, তাহলে এই প্রণোদনা পাবেন না।

এই প্রণোদনা তাহলে কাদের জন্য? এটা কি প্রণোদনা নাকি প্রহসন?”

দেশের স্বাস্থ্য কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালরকারী বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রণোদনার বাইরে রাখায় নিকট ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদক /সিলভিয়া মীম

Platform:
Related Post