X

কোভিড-১৯ নিরাময় ও এন্টি ভাইরাল ড্রাগ

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৮ মে ২০২০, সোমবার

ডা. জাহিদুর রহমান
ভাইরোলজিস্ট, সহকারী অধ্যাপক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

লক্ষ্য করে দেখবেন, বিশ্বে প্রচুর ভাইরাসজনিত রোগ থাকার পরও এখন পর্যন্ত কিন্তু খুব কম ভাইরাসের বিরুদ্ধেই কার্যকর ওষুধ (এন্টি ভাইরাল ড্রাগ) আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, পরজীবি, কৃমি এসবের বিরুদ্ধে যেমন প্রচুর ওষুধ আছে, ভাইরাসের বিরুদ্ধে কিন্তু তেমন নেই। এর পিছনে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ আছে।

প্রথমত, Selective toxicity বলে একটা বিষয় আছে। অর্থাৎ কোন ওষুধ যখন আমাদের শরীরে প্রবেশ করবে, তখন শুধু জীবাণুর উপর আক্রমণ করবে, আমাদের কোষের উপরে না। ভাইরাসের ক্ষেত্রে এই Selective toxicity অর্জন করা খুব কঠিন। কারণ গঠনের দিক থেকে ভাইরাস অন্যান্য জীবাণু থেকে সরল প্রকৃতির এবং অকোষীয়। ভিতরে এক খন্ড ডিএনএ বা আরএনএ আর বাইরে প্রোটিন ও কোন কোন ক্ষেত্রে লিপিডের আবরণ। এরা নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য আমাদের কোষের যন্ত্রপাতিই ব্যবহার করে। সুতরাং এমন ওষুধ আবিষ্কার করা খুবই কঠিন যেটি কিনা আমাদের কোষকে ধ্বংস না করে শুধু ভাইরাসকে ধ্বংস করবে।

দ্বিতীয়ত, বেশিরভাগ ভাইরাসের সুপ্তকাল বা ইনকিউবেশন পিরিয়ড অর্থাৎ শরীরে প্রবেশের পর থেকে লক্ষণ প্রকাশের আগ পর্যন্ত সময়টুকু খুব কম হয়ে থাকে (গড়ে কয়েকদিন) এবং এর সংখ্যা বৃদ্ধির কাজ এর মধ্যেই প্রায় শেষ হয়ে যায়। মানুষ সাধারণত ওষুধ সেবন করে লক্ষণ প্রকাশের পরে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে ওষুধ দিলে সেই সময় আর কাজ করে না, কারণ এর আগেই এদের প্রচুর পরিমাণে সংখ্যা বৃদ্ধি হয়ে যায়। যে ভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড যত কম, স্বাভাবিকভাবেই সেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ওষুধও তত কম কার্যকর হবে।

তৃতীয়ত, ভাইরাস খুব ঘন ঘন নিজের গঠন পরিবর্তন করে (মিউটেশন), বিশেষ করে আরএনএ (RNA) ভাইরাসগুলো। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে কার্যকর ওষুধ আবিষ্কার করা যেমন কঠিন তেমনি খুব সহজেই ড্র্যাগ রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়। এ কারণেই লক্ষ্য করবেন এইচআইভি, হেপাটাইটিস সি, হেপাটাইটিস বি এর মত ভাইরাসের বিরুদ্ধে এক সাথে কয়েক ড্রাগ ব্যবহার করা হয়, যাতে একটির বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্স তৈরি হলেও অন্যগুলো কাজ করতে পারে।

সোজা কথা একটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধ আবিষ্কারের ক্ষেত্রে যতগুলো বাঁধা থাকা দরকার, তার সবগুলোই SARS-COV-2 এর ক্ষেত্রে আছে। তারপর আবার এটি নতুন আবিষ্কৃত ভাইরাস। কোন ধরণের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ছাড়া কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগিদের যে কোন ধরণের এন্টি ম্যালেরিয়াল, এন্টি প্যারাসাইটিক বা বিভিন্ন প্রকার এন্টিবায়োটিক সেবন করা বড় ধরণের অজ্ঞতা এবং ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া একটা ওষুধ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে, তার মানে এই না দোকান থেকে এনে আপনি খেয়ে ফেলবেন।

চেষ্টা থেমে নেই। এই চেষ্টার কারণেই এইচআইভির মত শতভাগ মরণঘাতী রোগকে আজকে বলা হচ্ছে “প্রায় নিরাময়যোগ্য” এবং এটি সম্ভব হয়েছে কার্যকর এন্টি ভাইরাল ড্রাগ আবিষ্কারের মাধ্যমেই। কিন্তু প্রতিটি ভাইরাস আলাদা। কোভিড-১৯ এর গঠনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে যত চেষ্টাই করা হোক নিকট ভবিষ্যতে এর বিরুদ্ধে কার্যকর ওষুধ, ভ্যাকসিন কিংবা এন্টিজেন-এন্টিবডি নির্ভর rapid test আবিস্কারের সম্ভাবনা কম। দয়া করে এই সাধারণ কথাগুলো মগজে ঢুকিয়ে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে যে প্রমাণিত কাজগুলো আছে, সেগুলো করুন। ৬ ফুট দূরে থাকুন, বারবার নিয়ম মতো হাত ধুয়ে নিন, বাইরে গেলে ফেসমাস্ক ব্যবহার করুন।

Abdullah Al Maruf:
Related Post