X

কোভিড-১৯ এর দিনগুলো

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৪ আগস্ট, ২০২০, শুক্রবার

ডা. লুৎফুননাহার শম্পা
জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি এন্ড অবস্),
ডিএমসিএইচ কে-৫৭, ডিএমসি

মাত্রই ডিএমসিএইচ কোভিড ইউনিটে দ্বিতীয় রাউন্ডের ডিউটি শেষ করলাম। গতবারের ডিউটির সাথে এবার বেশ কিছু পার্থক্য ছিল।
মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে যখন প্রথম কোভিড ইউনিটের গাইনি বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছিলাম তখন রোগী ছিল কম কিন্তু সব সলিড। ৫০% রোগী ছিল করোনা পজিটিভ, বাকি ৫০% করোনার বিভিন্ন উপসর্গসহ। তখন প্রাইভেট হাসপাতালগুলো কোনো রোগী নিচ্ছিলো না। হোম আইসোলেশন নিয়ে কোনো পরিষ্কার ধারণা ছিল না। মানুষের ভীতি ছিল অনেক। যাওয়ার জায়গা ছিল অতি সীমিত। বড় বড় হাসপাতালের রোগী। বড় বড় স্যার ম্যাডামের রেফার করা রোগী। ভি আই পি রোগী ছিল অনেক। তারপরেও গাইনি বিভাগে রোগী ছিল কম এবং যুক্তিসংগত।

এরপর আসলো রঙের বাহার। নীল, লাল, বেগুনি। যেহেতু গাইনির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী শকে আসে, খিঁচুনি নিয়ে আসে, শ্বাসকষ্ট, জ্বর নিয়ে আসে তাই রেডজোন থেকে আসা সব রোগী কোভিড ইউনিটে রেফার করা হয়। করোনা পজিটিভ, করোনা সাস্পেক্টেড, রেডজোন থেকে আসা রোগী সব কোভিড ইউনিটে। আর যেখানে পুরো ঢাকা শহর রেডজোন, পুরা বাংলাদেশ রেডজোন তখন অবস্থা সহজেই অনুমেয়। আর নিধিরাম সর্দার হিসেবে আছে একজন কন্সালটেন্ট এর তত্ত্বাবধায়নে একজন সিনিয়র এবং দুইজন জুনিয়র ডাক্তার, দুইজন সদ্যপাশ করা মিডওয়াইফ। রোগীদের যদি ভাগ করতে হয় ভর্তি রোগী অনেক- ৭০/৮০ জন। পজিটিভ রোগীর সংখ্যা কম, সাস্পেক্টেড রোগী একদম হাতে গোনা, ৯০% রোগী রেড জোনের। যদিও ভর্তি করার সময় সম্ভব-অসম্ভব সবধরনের কাউন্সেলিং করা হয়, রেডজোন থেকে আসা রোগীগুলো ইমার্জেন্সির কারনে কিছুটা বাধ্য হয়েই কোভিডে ভর্তি হয় আর যাওয়ার জায়গা কই!
ভর্তি রোগীদের ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এর পাশাপাশি কোভিড -১৯ এর জন্যও টেস্ট দেয়া হয়। সমস্যা হলো যখনই তাদের ইমার্জেন্সি অবস্ট্রেটিক ম্যানেজমেন্ট হয়ে যায়, তারা আর কিছুই করতে চায় না, করোনা টেস্ট তো নাই। কারণ তারা তো করোনা রোগী না, তাদের এলাকায় কোনো করোনা রোগী নাই। আর রোগীদের এটেন্ডেন্টরাও খুব বিন্দাস। দুনিয়ার আত্মীয়স্বজন, মাস্কের বালাই নাই বেশিরভাগের ফলফ্রুট নিয়ে তারা রোগী দেখতে আসে। ঠাস করে ডাক্তারদের রুমে ঢুকে যাচ্ছে। কয়েকজনের সাথে কথা বললাম। তারা খুবই ড্যামকেয়ার।
– “ম্যাডাম করুনা তো গ্যাসে গা”
– “কিচ্ছু হইতো না”
– “গরীবের আবার করোনা কি!”
– “আল্লাহ চাইলে কি আপনি আমি কিছু করতে পারুম! ”

একজন তো আমাকে বলেই ফেললো,
– “ম্যাডাম, ভয় পাইয়েন না। আল্লাহকে ডাকেন”

আসলেই আল্লাহকে ডাকতে ডাকতেই এক সপ্তাহ পার করেছি। করোনা বা অসংখ্য রোগীর ভয়ে না বরং অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে সে আশংকায়। ইদের সপ্তাহ হওয়াতে খুব খারাপ খারাপ কিছু রোগী ছিল। ঝামেলা ছিল অনেক, ২৪×৭ দৌড়ের উপর থাকতে হয়েছে কিন্তু গাইনি ও এ্যানেস্থেশিয়া ডাক্তার, মিডওয়াইফ, ব্রাদার – সিস্টার, ওয়ার্ডবয় সবার সম্মিলিত সহযোগিতায় যতটা আতংক নিয়ে সপ্তাহ শুরু করেছিলাম, সপ্তাহ শেষে খারাপ যায়নি আলহামদুলিল্লাহ! এরকম পরিস্থিতিতে কিছু সিস্টেম লস থাকবেই। পেশেন্ট লস না হলেই হলো, স্বাস্থ্যকর্মীরা সুস্থ থাকলেই হলো।

কিন্তু একটা ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিরক্ত হয়েছি। যখনই কোনো ইমার্জেন্সি কারণে কাউকে ফোন দিচ্ছি। মোবাইল কোম্পানির জনসচেতনতামূলক ভাষণে মেজাজ ধরে রাখা কঠিন হয়ে যেত। দেশের মানুষ করোনা জয় করে ফেললো, মার্কেট -ময়দানে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর এরা এখনো হাত ধুয়েই যাচ্ছে। এটা বন্ধ করা যায় না!

Nafisa Nusrat:
Related Post