X

আইসিইউ ডায়েরি – ১

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ০৩ মে ২০২০, রবিবার:

ডা. মেহেদী হাসান

এই শ্বাসকষ্ট যেন ডুবে যাবার অনুভূতি। ১৪ টা কোভিড পেসেন্ট নিয়ে অদৃশ্য ভাইরাসের সাথে এক অসম যুদ্ধে নেমেছি। এ যুদ্ধে আমি একই সাথে ফ্রন্টলাইন ফাইটার এবং একজন আতঙ্কিত দর্শক। দর্শকের দৃষ্টি দিয়ে যা দেখছি সে গল্পই আজ শুনাতে এসেছি আপনাদের।

এ এক তুমুল যুদ্ধ এবং যুদ্ধ পরবর্তী বাস্তবতার গল্প।
মানবদেহের কোটি কোটি কোষের সাথে এক ঊনকোষী ভাইরাসের সম্মুখ সমরের গল্প। পরিপূর্ণ কোষ না হয়েও কিভাবে ভাইসারটি কোটি কোটি কোষ বিশিষ্ট মানবদেহকে নাস্তানাবুদ করছে তার অনুপুঙ্খ বর্ণনা থাকছেনা এ গল্পে। তবে সহজে বোঝার জন্য একটা জেনারেল ওভারভিউ দিয়ে গল্পের পরবর্তী অংশে প্রবেশ করব। ইনশাআল্লাহ।

রজনীকান্তের রোবট সিনেমার মত কৌশলে ভাইরাসটি মানব দেহের ভিতরে ঢুকে নিজের একটা আর্মি তৈরি করে ফেলে এবং হাজার হাজার কোষকে টার্গেট করে উপর্যুপরি আক্রমণ সানাতে থাকে। তবে যুদ্ধটা একতরফা নয়। ধুম করে এমন এক অযাচিত আর্মির মুখোমুখি হয়ে মানবদেহ আমাদের অপ্রস্তুত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মত অপরিকল্পিত ভাবে ডিফেন্স মেকানিজম এক্টিভেট করে। খেই হারানো মানবদেহ বুঝতে পারে এ কোন পরিচিত প্রতিপক্ষ নয়।

তবে ততক্ষণে মানবদেহের এই অপরিকল্পিত পাল্টা আক্রমন ভাইরাসকে কোনঠাসা করতে না পারলেও নিজেকে কাবু করে ফেলে। জ্বর, সর্দি, কাশি আর গলাব্যথার সাথে প্রচন্ড ক্লান্তি ভাবনায় ফেলে দেয় মানবদেহকে। তবে হিউম্যান বডিকে আল্লাহপাক অতি সূক্ষ্ম ভাবে তৈরি করেছেন। আমাদের ঘাওরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মত নিজের ভুলে অনড় থেকে মিথ্যার বেসাতি না সাজিয়ে মানবদেহ উপলব্ধি করে ক্যালকুলেশনে ভুল হয়েছে।

ভুল উপলব্ধি করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণের জন্য ডাক পড়ে এক্সপার্টদের। এটা একটা যুদ্ধ পরিস্থিতি। মানবদেহ অতটা উজবুক নয় যে এই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে তার এক্সপার্ট প্যানেলের মতামতকে উপেক্ষা করবে। শুরু হয় এক পরিকল্পিত পাল্টা আক্রমণ। যাদের শরীরের এক্সপার্ট প্যানেল স্ট্রং, এই শানিত প্রতিআক্রমণে, তারা সহজেই ভাইরাসকে কোনঠাসা করে ফেলে এবং একটা পর্যায়ে বিজয়ীর বেশে ঘরে ফেরে। এজন্যই ম্যাক্সিমাম রোগী ভাল হয়ে যাচ্ছে।

এই এক্সপার্ট প্যানেলই আমাদের শরীরের স্বভাবজাত প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইনেট ইমিউনিটি। তবে সবার এক্সপার্ট প্যানেল স্ট্রং না। বৃদ্ধ এবং নানা প্রকার রোগে শোকে ভোগা মানুষ সহজে এই শক্তিশালী ভাইরাস বাহিনীকে পরাজিত করতে পারে না। যুদ্ধ প্রলম্বিত হয়। শুরু হয় তীব্র শ্বাসকষ্ট আর আইসিইউ ডাক্তারদের রাতের ঘুম তোলা থাকে কোয়ারান্টাইন পিরিয়ডের জন্য।

শ্বাসের জন্য রোগীদের তীব্র এই হাহাকার দেখে একটা হাদিসের কথা মনে পড়ে গেল।

“পাঁচটি জিনিসকে পাঁচটি জিনিস আসার আগে গনিমতের অমূল্য সম্পদ হিসেবে মূল্যায়ন করো। জীবনকে মৃত্যু আসার আগে। সুস্থতাকে অসুস্থ হওয়ার আগে। অবসর সময়কে ব্যস্ততা আসার আগে। যৌবনকে বার্ধক্য আসার আগে এবং সচ্ছলতাকে দরিদ্রতা আসার আগে।”

Abdullah Al Maruf:
Related Post