X

করোনায় প্লাজমা ডেরাইভড থেরাপি প্রয়োগ

২৮ এপ্রিল, ২০২০, মঙ্গলবার

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শতকরা ৮০ ভাগ সামান্য সর্দি-জ্বর, কাশির পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যান। কারণ করোনাভাইরাস আক্রমণের পর আক্রান্তের দেহে আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত ক্ষমতায় স্বয়ংক্রিয় ভাবে তৈরি হয় করোনাভাইরাস প্রতিরোধী এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ। এর নাম এন্টিবডি, Ig M ও Ig G। এই এন্টিবডি পরবর্তীতে করোনাভাইরাস আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে, ফলে করোনাভাইরাস দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে যায়।

এখন অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, একজন সুস্থ মানুষের দেহে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে যাওয়া রোগীর শরীর থেকে সেই রোগ প্রতিরোধী এন্টিবডি সংগ্রহ করে তার রক্তে পুশ করা হয়, তবে কি সেই সুস্থ মানুষ করোনাভাইরাস আক্রমণ থেকে সুরক্ষা পাবেন কিনা? চিকিৎসা বিজ্ঞান এ ব্যাপারে কী বলে?

এরকম একজনের শরীর থেকে এন্টিবডি নিয়ে অন্যের শরীরে দেয়াকে বলা হয় প্লাজমা থেরাপি। এ প্লাজমা থেরাপি করোনাভাইরাস এর ক্ষেত্রে কতটুকু কার্যকর হবে? ইদানীং এ বিষয়ে অনেকেই জানতে চাচ্ছেন।

কারো শরীর থেকে কোন রোগের আক্রমণের পর আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্ট এন্টিবডি সংগ্রহ করে, যদি সুস্থ মানুষের দেহে পুশ করা হয়, তবে যে জীবাণুর বিপরীতে ঐ প্রতিরোধী এন্টিবডি তৈরি হয়েছে, ঐ জীবাণু দিয়ে আক্রমণ থেকে তিনি সুরক্ষা পাবেন। এই পদ্ধতির নাম Serum Convalescent therapy।

করোনাভাইরাস থেকে এ পদ্ধতিতে সুরক্ষা পাওয়া যাবে কি যাবেনা, প্রথমে প্রশ্নটির উত্তরে বলি , “হ্যা, প্লাজমা ডেরাইভড থেরাপি করোনাভাইরাস এর ক্ষেত্রে সুফল পাওয়া গিয়েছে। সম্প্রতি চীনে এর প্রয়োগ হয়েছে। সুফল পেয়েছেন চীনা চিকিৎসকরা, আমেরিকাতেও সম্প্রতি এর অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

আসুন ইতিহাসের মাপকাঠিতে এ প্লাজমা ডেরাইভড থেরাপির প্রয়োগ দেখি।

কিছু ঐতিহাসিক মহামারী ঠেকাতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এই এন্টিবডি থেরাপি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে এবং সুফল পাওয়া গিয়েছে। যেমন,

১৯১৮ সালে স্প্যানিশ ফ্লু এর আক্রমণে যখন ইউরোপে লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছিলেন, তখন এক পর্যায়ে চিকিৎসকগণ এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন।

স্প্যানিশ ফ্লু থেকে সুস্থ হওয়া রোগী থেকে সিরাম এন্টিবডি সংগ্রহ করে, তা অসুস্থ ও সুস্থ মানুষের দেহে পুশ করে দিয়েছিলেন। এতে স্প্যানিশ ফ্লু এর সংক্রমণ শতকরা প্রায় ৫০ ভাগ কমে গিয়েছে।

একই ভাবে ১৯৩৪ সালে পেনসেলভেনিয়াতে মিজেলস রোগের মহামারী ঠেকাতে সুস্থ শিশুদের দেহে অসুস্থ শিশুদের রক্তের এন্টিবডি দেয়া হয়েছিলো এবং ভালো সুফল পাওয়া গিয়েছে। ৬২ জন সুস্থ ছাত্রের শরীরে মিজেলস এন্টিবডি পুশ করা হয়েছিলো এবং এতে ৫৯ জন ছাত্র মিজেলস রোগ থেকে সুরক্ষা পেয়েছিলো।

এই প্লাজমা ডেরাইভড থেরাপি অতি সম্প্রতি ইবোলা মহামারী ও এভিয়ান ফ্লু মহামারীতে ও প্রয়োগ করা হয়েছিলো, এবং সুফল পাওয়া গিয়েছে।

জাপানের তাকাডা ফার্মাসিউটিক্যালস এ নিয়ে গবেষণা করছে। হয়তো তারা অচিরেই এ পদ্ধতির আরেকটু উন্নত সংস্করণ করে করোনাভাইরাস এর প্রতিষেধক তৈরী করে ফেলবে। করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়া রোগীর কাছ থেকে রোগ প্রতিরোধী সিরাম এন্টিবডি সংগ্রহ করে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই পোগ্রামের নাম TAK -888।

আমাদের বাংলাদেশের স্বনামধন্য ইমিউনলজিস্ট ও ভাইরোলজিস্ট গণ এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন এবং গবেষণা শুরু করতে পারেন।

ডা. সাঈদ এনাম
সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ

Platform:
Related Post