X

করোনায় আক্রান্ত এক পরিবারের ইতিকথা

বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০

আমরা কোভিড আক্রান্ত পরিবার

যেদিন প্রথম জানলাম আমরা বাসার সবাই কোভিড পজিটিভ, সেই দিনকার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মাথাটা যেন পুরোপুরিভাবে শূন্য হয়ে গিয়েছিলো। বাসায় আমার ছেলেমেয়ে, বৃদ্ধ কো-মরবিড শ্বশুর-শ্বাশুড়ি। আমার বিয়ের পরদিন থেকে আজ অবদি আমরা একসাথে আছি। আমার ছেলে, মেয়ে, আমার সংসার স–বকিছু পরম মায়া, মমতা আর ভালোবাসায় আগলে রেখেছেন মা-বাবা। আজ আমাদের সান্নিধ্যে থেকে তাঁরাও আক্রান্ত। পরম অপরাধবোধে জর্জরিত হয়েছিলাম। বাবা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, CKD এর রোগী। কয়েকমাস আগে pontine stroke এ আক্রান্ত হয়ে দেড় মাস বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। Hemiplagia ডেভেলপ করেছিলো তাঁর। বাসায় আসার পরেও তিনমাস ফিজিওথেরাপি নিয়ে এখন অনেকটা সুস্থ। বাইরে হাঁটাচলায় কোন সমস্যা নেই। মা ডায়াবেটিক, হাইপারটেনসিভ। তাদের বাসায় রেখে চিকিৎসা করার সিদ্ধান্ত ছিলো অনেক বড় চ্যালেন্জ। পরিবারের সবাই একসাথে আক্রান্ত। তার ওপর বাসার কাজে সাহায্যকারী মেয়েটা বাড়ি গিয়ে লকডাউনে আটকা পরে আর আসতে পারে নি।

থানা থেকে এসে আমাদের পুরো বিল্ডিং মাইকিং করে লকডাউন করে দিয়ে গেছে। বারিধারা ডিওএইচএস পরিষদের পক্ষ থেকে বিল্ডিং এর মেইন কলাপসেবল গেইটে তালা লাগিয়ে দিয়েছে যেন কেউ এই বাসায় ঢুকতে অথবা বাইরে বের হতে না পারে। পরিষদের চেয়ারম্যান বাসায় ফোন দিয়ে বললেন পুরো ডিওএইচএস এলাকায় আমরাই একমাত্র আক্রান্ত। তারা এ নিয়ে গভীর চিন্তিত। আমরা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাসায় কেন অবস্থান করছি ইত্যাদি। আমার পাশের রোডে থাকে আমার ছোটবোন। সেই এই বিপদের সময় প্রয়োজনীয় ওষুধ, বাজার সব নিয়ে সময় সময় এসে নিচে কেয়ারটেকারের হাতে দিয়ে গেছে। আমাদের এলাকার সবাই জানে আমরা আক্রান্ত। আশেপাশের বিল্ডিং এর সবাই বারান্দায় আসা, বসা বন্ধ করে দিয়েছে। দূর থেকে কথা বলা তো দূরের কথা। ডাক্তার হিসেবে যেহেতু disease সম্পর্কে সব জানি সব complications এর কথা মাথায় ঘোরাঘুরি করতো। হঠাৎ অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে কি করবো, কোন prophylactic anticoagulant শুরু করবো কি না কতো যে চিন্তা। ভাগ্যিস বাসায় একটা পালস অক্সিমিটার ছিলো। ঘরের সবাইকে দেখে রাখা, সময়মতো ওষুধ খাওয়ানো, সবাইকে সাহস দেয়া, ঘরের সব কাজ করা— সবকিছু মিলিয়ে একটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। সৃষ্টিকর্তার অপার মহানুভবতায় ছোটখাটো প্রবলেম face করতে করতে অনেকটা পথ তো পেরিয়ে এসেছি।

আমার হাসপাতালের ডিরেক্টর স্যার, সাদিয়া ম্যাডাম, ICU এর হেড ডাঃ আসাদুজ্জামান ভাই, মেডিসিন কনসালটেন্ট মামুন ভাই, সমস্ত সহকর্মী সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই এই পারিবারিক বিপর্যয়ে আমাকে সাহস দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে, আমাদের জন্য দোয়া করার জন্য। সঞ্চিতা দিদি প্রতিদিন ফোন করে খবর নিয়েছেন। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।

ডা. নাদিরা
সিনিয়র কনসালটেন্ট, গাইনি এন্ড অবস

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক/ অংকন বনিক

অংকন বনিক:
Related Post