X

করোনার দিনগুলোয় ১৬ || করোনার টিকা স্পেন পাচ্ছে আমরা কেন পাইনা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৮ ডিসেম্বর ২০২০, শুক্রবার

ডা. মোহাম্মদ আল-মামুন
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এফসিপিএস (সার্জারি)
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

আজ সকালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক মহিলা আসলেন করোনার টিকা নিতে। তিনি শুনেছেন যে এখানে নাকি করোনার টিকা দেয়া হয়।

শুনে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। আমি অবশ্য প্রথমে ভেবেছিলাম নিয়মিত টিকাকে হয়তো ভুল করে করোনার টিকা বলছেন। পরে আমার ভুল ভাঙ্গলো। তিনি আসলেই করোনার টিকা নিতে এসেছেন।

গ্রামের অল্পশিক্ষিত এই মহিলার দোষ কি? জীবন রক্ষাকারী টিকা নিতে চাইবেন এটাতো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু আমরাতো দিতে পারছি না।কিংবা এই মহিলা কোনদিন পাবেন কিনা তাও জানিনা। হয়তো বা তিনি ফ্রি কখনোই পাবেন না। সরকার না কিনতে পারলে তিনি ফ্রি পাবেন কিভাবে!এমনও হতে পারে কিনে দেবার সামর্থ্য তার নেই।

পৃথিবীর সকল সভ্যতায় নেতা আসে নেতা যায়। কেউ কেউ জাতিকে অনন্য উচ্চতায় উঠিয়ে দিয়ে যায়। তারা ক্ষমতা ভোগ করে ঠিকই, তবে জাতিকে  দিয়ে। আর এই সাধারন মানুষগুলো নিতান্তই ক্ষমতার উপলক্ষ্য থাকে।

তারা না ক্ষমতা চায়, না পায়।

জনতার বিরাট একটি অংশই ক্ষমতার একটি মাধ্যম হয় মাত্র।

এই মহিলাও হয়তো অনেক বার ভোট দিয়েছেন।হয়তো তিনি জানেনও না কেন ভোট দিচ্ছেন, কেন দিয়েছেন। তাদের চাওয়া পাওয়া জীবন ধারনের অতি সরলীকরনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

কিন্তু আমরা তাদের বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দিতে পারলাম কোথায়?

আমরা পড়াশুনা করেছি দেশের কাজে লাগার জন্য, দেশের মানুষের কাজে লাগার জন্য।

আক্ষরিকভাবেই দেশ সেবা করতে পারলাম কোথায়?

ইউরোপ টাকা দিয়ে টিকা কিনছে। আমরাও টাকাই দিবো। তাদের সমান টাকাই দিবো। কিন্তু তবু আমাদেরকে এই প্রথম দফা টিকা কেউ দিবে না।

কারন আমরা আসলে পশ্চিমাদের চোখে উনমানুষ।তাদের চোখে যেহেতু আমরা এখনো পুরোপুরি মানুষ নই, কাজেই বিজ্ঞানে উন্নত পৃথিবীর কাছে আমাদের মূল্য খুব সামান্যই। উন্নত দেশগুলোকে টিকা দিয়ে তাদের সাথে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখবে উন্নত দেশগুলো যেমনটি আত্মীয়তার ক্ষেত্রে হয় আমাদের দেশে। যার যার স্ট্যাটাস অনুসারে আত্মীয় হয়, স্ট্যাটাস অনুসারে আত্মীয়তা টিকে থাকে।

অথচ মাত্রই কয়েকশ বছর আগেই এরা ছিলো গরীব, অসভ্য। আর আমরা ছিলাম সম্পদশালী, পৃথিবীর অন্যতম সম্পদের ভান্ডার এবং অত্যন্ত নিরীহ ,সভ্য মানুষ। যারা খারাপ কিছু করতে জানতো না। এই সভ্য মানুষগুলোকে চুরিদারি শিখিয়েছে পশ্চিমারাই, যারা আজকে সভ্যতার বাহক বলে দাবীদার।

পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা ও আমাদেরই ছিলো যেখান থেকে সভ্যতা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়েছে।

কে জানে ইউরোপিয়ানরা তাদেের সভ্যতার প্রথম পাঠ সিন্ধু সভ্যতা থেকেই নিয়েছে কিনা! ওরা ছিলো খাবার খেতে না পাওয়া অভুক্ত জলদস্যু। এই জলদস্যুরাই নিজেদেরকে গঠন করেছে আধুনিক সভ্যতার অন্যতম কারিগর হিসেবে।

ইউরোপিয়ান, আমেরিকানদের বর্তমান সভ্যতা তৈরীই হয়েছে অন্য সভ্যতার সম্পদ লুট করে করে।

ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবি যাই হইনা কেন, যতবড় রাজনীতিবিদই হই না কেন, আমাদের পরিচয় বাঙালি হিসেবেই। করোনার টিকা অন্যদেশ বিক্রয় করবে আপনার দেশ হিসেবেই, ব্যক্তি হিসেবে নয়। আপনি ব্যক্তি যাই হোন না কেন, এর কোন আলাদা মূল্য নেই।

তাই তো আমাদের অত্যন্ত ঐক্যবদ্ধ, সত্যবাদি, দূর্নীতিমুক্ত জাতি গঠন অত্যন্ত জরুরী। জাতিগত ভাবে আমরা বড় অবস্থানে না যেতে পারলে আমরা কোনদিনই পৃথিবীর বুকে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবো না। যারা দূর্নীতি করে টাকার পাহাড় বানায় এটি তার নিজের জীবনে কোন কাজে লাগেনা, সন্তানরাও নষ্ট হয়ে কোন কাজে লাগাতে পারে না। কথায় আছে জুয়ার টাকা কোন কাজেই লাগে না, এটি শুধু নেশা এবং বাজে কাজেই খরচ হয়। তেমনি দূর্নীর্তির টাকা ও কোন গঠনমূলক কাজে আসে না, কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে না। এগুলো খরচ হয় মদ আর জুয়ার আসরেই। এই টাকা আয় করে কি লাভ?

আমাদের স্বাধীনতার বয়স কম হয়নি। এই একই সময়ে কাতার কোথায় আর কোথায় আমরা?ইউরোপিয়ান দেশগুলো তখন কোথায় ছিলো আর এখন কোথায়?

আমরা নিজেরা ঐক্যবদ্ধ নই। চুরিদারিতে অত্যন্ত সিদ্ধহস্ত আমরা। আমরা কাজের কাজ কিছুই পারি না। রং মিস্ত্রি পারেনা রংয়ের কাজ, টাইলস মিস্ত্রি টাইলসের কাজ জানে না, ড্রাইভার পারেনা গাড়ি চালাতে। আমরা প্রচন্ড অদক্ষ তাই আমরা দূর্নীতি খুঁজি।

আমাদের অবস্থা এতোটাই খারাপ যে আমাদের গৃহস্থ ও গরুর দুধে পানি মিশিয়ে বিক্রয় করে, যারা অত্যন্ত তৃনমূল লেভেলের। এতো রুট লেভেলেও যদি অন্যায় হয় তবে এর শেষ কোথায়!

আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিলেন প্রাচীন সভ্যতার কারিগর। আমরা কি পারব না আমাদের বর্তমান জনগোষ্ঠী দিয়েই অত্যন্ত সভ্য জাতি তৈরী করতে যারা পৃথিবীর বুকে মাথা উচু করে দাঁড়াবে। সম্ভব নিশ্চয়ই।

Sarif Sahriar:
Related Post