ইন্টার্ন শেষ হওয়া একসাথে আনন্দ ও বেদনার। প্রায় ছয় বছর একটা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িয়ে থাকা,সেখানে নিজের জীবনের একটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ পার করার পর সেই পরিবেশ থেকে বিচ্ছেদ নেওয়া যেমন কষ্টের,তেমনি একজন পরিপূর্ণ ডাক্তার হিসেবে সমাজে প্রবেশ করে নিজের জীবনকে সাজানোর স্বপ্নের হাতছানি একই সাথে প্রত্যাশা বোধের আনন্দ তৈরি করে!
তবে ইন্টার্ন শেষ হওয়ার পর যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশী সংকট সৃষ্টি করে আর তা হলো এরপরে কি করবো,এরপরে কিভাবে নিজের লক্ষ্যের দিকে আগাবো বা লক্ষ্যটাই বা কি,সেটা ঠিক করতেই হিমশিম খেতে হয়।
বেশীরভাগ সময় যে তিনটা জিনিস নিয়ে মাথার মধ্যে সবার প্যাচ লাগে তা হলো-পোস্টগ্র্যায়ুশেন,বিসিএস নাকি সংসার।তবে আমার কাছে মনে হয়েছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো-অর্থনৈতিক!..এটা ইমিডিয়েট ক্রাইসিস!
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি ইন্টার্ন শেষ হওয়ার পর নিজের পকেটে এক টাকাও থাকে না!..সেকারনে সবার অর্থ সংকলন করার চিন্তাটা সবার প্রথমে আসে!
তবে আমার প্রথম সাজেশন হবে ইন্টার্ন পিরিয়ডের মধ্যেই আল্ট্রাসনোর উপর CMU কোর্স্টা করে ফেলা।এতে দুইটা জিনিস হবে- একটা খ্যাপ(কথাটা খারাপ শুনালেও এটাই বাস্তবিক শব্দ) মারতে আরেকটা একাডেমিক জ্ঞান সমৃদ্ধ হবে,কারন বাংলাদেশে অধিকাংশ রোগে একটা আল্ট্রাসনো অবশ্যই করা হচ্ছে।
অর্থনৈতিক সমস্যাটা নির্ভর করে চাহিদার উপর।তবে আমি ধরে নিচ্ছি সেই ইন্টার্নটার কথা যার এখন কোন টাকা নেই হাতে এবং ফ্যামিলি সাপোট নাই বা নিতে সম্মানে বাধে!..
তাহলে আমার এইক্ষেত্রে সাজেশন হচ্ছে বা আমি আবার সেই সময় যদি ফিরে যেতে পারতাম তাহলে প্রথম ছয় মাস ICU বা এনেস্থেশিয়াতে ট্রেনিংএ ঢুকতাম এবং ফাকে ফাকে ক্লিনিক ডিউটি করতাম যাতে কোনমতে মাসটা চালানো যায়।
এই ট্রেনিং করতে পারলে বেশ কিছু সুবিধা আছে।ICU এর মত সুন্দর,শান্ত এবং উচ্চ বেতনশীল পরিবেশে যেমন কাজ করা যাবে তেমনি ক্রিটিকাল রোগী ম্যানেজ করার ব্যপারে খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা হবে।একবার ICU এর কাজ করার পরিবেশে ঢুকতে পারলে প্রায় পোস্টগ্রাজুয়েশন হওয়া পর্যন্ত অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকা যায়।
ট্রেনিং শেষ পরই কোন ক্লিনিক ডিউটিতে ঢুকে পরা উচিৎ না।এর পরে যেটা করা উচিৎ সেটা হলো ‘খ্যাপ’ মারা বা যদি নিজের এলাকায় ভালো সুযোগ থাকে তাহলে চেম্বার প্র্যাকটিস করা।এখানে টার্গেট হলো টাকা জমানো।কিন্তু কোন পর্যন্ত?
সেই পর্যন্ত টাকা জমাতে হবে যাতে একবছর বসে বসে খাওয়া যায়।এই টাকাই পোস্টগ্র্যাজুয়েশন বা বিসিএসের একনিষ্ঠ প্রিপারেশন নিতে সাহায্য করবে।তবে কোন ভাবেই তা ছয় থেকে বারো মাসের বেশী হওয়া উচিৎ না।কারন টাকা দিয়ে শখ পূরণ বা তাকে অন্যান্য সমাধানের উৎস হিসেবে ধরলে তা অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে এবং সেখান থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হবে।
পোস্টগ্রাজুয়েশন নিয়ে খুব বেশী তাড়াহুড়ো করা একটা ভুল সিদ্ধান্ত আমার মতে।মানসিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে নিজেকে ভালো ভাবে প্রস্তুত করেই তারপরেই পাচ বছরের জন্য নিজেকে আত্মনিয়োগ করা ভালো।তবে বিসিএস না হলে সেটা ত্রিশ বছর বয়স হওয়ার মধ্যেই চান্স পেয়ে ঢুকে পড়তে পারলে ভালো।
আমার কাছে মনে হয়েছে চাকরি এবং একইসাথে পড়াশুনা করা কঠিন।খুব বেশী মেধাবী না হলে এই চরম প্রতিযোগিতার সময় এভাবে নিজের লক্ষ্য পূরণ করা অসম্ভব।একারনে টাকা পয়সার সমস্যার আপাত সমাধান করেই তারপর পড়াশুনায় একশত ভাগ মনোযোগী হলে সাফল্য পাবার সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে যাবে।
পোস্টগ্রাজুয়েশন আগে নাকি বিসিএস আগে।আমার মনেহয় কোনটাই আগে না দুইটাই একসাথে।তবে দুইটাই মধ্যে চয়েস করায় প্রয়োজন আসলে বিসিএসকেই বেছে নিতে হবে।তবে কোন একটার জন্য বসে থাকা বোকামি,দুইটার জন্যই প্রিপারেশন নিতে হবে।ভাগ্য,পরিশ্রম আর মেধা গণনা করে কোন কিছুই নিশ্চিতভাবে বলা যায়না।
বিদেশে চাকরি,বিদেশে পড়াশুনা এগুলো ব্যক্তিগত চাহিদার ব্যপার।তবে সুযোগ এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকলে অবশ্যই করা উচিৎ।তবে একজন বাংলাদেশী ডাক্তারের জন্য তা প্রতিদিন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে!
এইসময়ে আরেকটা জিনিস যেটা সমস্যা তৈরি করে সেটা হলো হতাশা।অর্থহীনতার হতাশা,ফ্যামিলি সংক্রান্ত হতাশা,সহপাঠীরা এগিয়ে গেলে সেই দেখে হতাশা,চান্স না পাওয়ার ব্যর্থতার হতাশা।এর যেকোন একটাই মানুষকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
এইক্ষেত্রে তারাই শুধু এগিয়ে যাবে যারা এই হতাশাগুলিকে পাশ কাটিয়ে পরিশ্রম আর সততার সাথে নিজেকে এই সময়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে!..কঠোর পরিশ্রম ছাড়া এই হতাশাকে এড়ানোর আর কোন পথ নেই।
এগুলো আমার সবগুলোই ব্যক্তিগত মতামত।আমি আবার চার বছর পিছনে ফিরে গেলে কি করতাম সেটাই বলেছি।কারো হয়তো কাজে লাগতে পারে,কারোর হয়তো অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে।আর সংসার আর বিয়ে এবং তার সাথে এই সময়ে যে সমস্যা হয় সেটা নিয়েও আমার একটা ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ আছে,পরে সুযোগ থাকলে লিখবো।
সদ্য শেষ করা এবং সদ্য যোগ হওয়া সব ইন্টার্নকেই ভবিষ্যতের জন্য অনেক শুভকামনা ও শুভেচ্ছা!
লিখেছেন-Abdur Rahman Moon
View Comments (31)
Arup Kumar Sarker
Honary
CCD, CMU, DMU etc.
Musfiqur Rahman Sifat
দুটো একসাথে ধরতে একটু মধ্যম সারির স্টুডেন্টরা পারে না।
dilip sir ar coacing jodi postgraduation korte chan, r jara bcs korte chan tader jonno bcs coacing addmission howa valo,,,r jader tk ar khub dorkar tara aktana khep mere kisu tk kamaite paren,,,akhon decision upnakai nite hobe???kunta upnar jonno perfect?aita hoitase amr personal opinion just
loan. নিয়ে পড়ালেখা করেন, পরে শোধ করিয়েন :)
Tuhibur Rahman Tusher
Abar bujbe Doctor houer Mona?
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পেশায় কিছু কষ্ট তো থাকবেই
Shumayea Siddika Fahima Chowdhury loboni Labony Timu Rohima Rose