X

ইন্টারনেটে প্রাপ্ত স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা

 

 

মনে করে দেখুন  তো আপনার কোন এক সময় সর্দি, কাশি কিংবা জ্বর হয়েছিল, তখন কত রকমের চিকিৎসা উপদেশ পেয়েছিলেন! নিশ্চয়ই কেউ না কেউ বলেছে বাসক পাতার রস করে খাও, কিংবা তুলসি পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে খাও, গলায় গরম সরিষার তেলের সাথে লবণ দিয়ে গলায় মালিশ কর ইত্যাদি।

আর এখন তো সবার হাতে হাতে মোবাইল তাতে আবার ফেসবুক, হোয়াটস্ অ্যাপ আরও কত কি। তথ্য চাইলেই গুগল কিংবা উইকিপিডিয়া থেকে বিস্তারিত এসে হাজির চোখের নিমিষেই। পাশাপাশি আরো কত কত যে ওয়েবসাইট তৈরি হয়েছে আপনার স্বাস্থ্য সুরক্ষা, রোগ নির্ণয় কিংবা রোগ চিকিৎসার জন্য। এখন কথা হচ্ছে কোন তথ্যটি সঠিক, কোনটি আপনি বিশ্বাস করবেন আর কোনটিই বা মেনে চলবেন তা নির্ধারণ করা।

যে কেউ চাইলে তার মনগড়া তথ্য দিয়ে একটা ওয়েবসাইট খুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারে খুব সহজে।  তাতে আপনার প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনাটা বাড়তেই থাকে। আর সাথে বাড়তে থাকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। তাই তথ্য আহরণের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে।

 

এখানে আমরা আপনাকে একটু রাস্তা দেখাতে পারি এই তথ্যের নির্ভরতা যাচাই করার। কয়েকটি সাধারণ বিষয়ের দিকে নজর রাখলে আপনি খুব সহজেই বিশ্বাসযোগ্য তথা নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য তথ্য পেতে পারেন।

 

. কারা ওয়েব সাইটটি চালায়?

স্বাস্থ্য তথ্যটি কোথায় প্রকাশিত হয়েছে বা কে ওই রচনাটি লিখেছেন তার পরিচয় দেওয়া থাকলে ভালো। না থাকলে তা জানার চেষ্টা  করতে হবে। কোন ওয়েব সাইটের About us লিংক থেকে জেনে নিতে পারেন যে ওই ওয়েব সাইটের পিছনে কাদের হাত রয়েছে। লেখকের প্রকৃত পরিচয় উল্ল্যেখ করা আছে কি না। সাধারণতঃ দায়িত্বশীল ওয়েব সাইটের প্রকাশনাতে লেখকের নাম ও পেশাগত পরিচয় দেওয়া থাকে; কোন কোন ক্ষেত্রে তার কর্মস্থলের নামও প্রকাশিত থাকে।

 

. কারা ওই ওয়েবসাইটের বিনিয়োগকারী অর্থ্যাৎ অর্থায়ন কারা করেছে?

একটা ওয়েব সাইট চালাতে পয়সা লাগে। তাই দেখুন যে ওয়েব সাইটটি কাদের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি। কেন না ওয়েব সাইটের কন্টেন্ট মানে তথ্য পৃষ্ঠপোষকের তদারকি দ্বারা প্রভাবিত হয়। যেমনঃ স্বাস্থ্য বাতায়ন https://www.facebook.com/ShasthoBatayon/ নামের সাইটটি বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অর্থায়নে চালিত এবং নিরীক্ষিত। তাই এখানকার তথ্য আপনি বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবে সাদরে গ্রহণ করতে পারেন। আবার ওয়েব সাইটের ঠিকানায়  .gov, .edu, .org কিংবা .com থাকলে আপনি বুঝতে পারবেন যে এটি যথাক্রমে সরকারের, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের, কোন সংস্থার কিংবা কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েব ঠিকানা।

শিশুর বেড়ে ওঠা  http://www.shishurbereutha.com/ যদিও এর ওয়েব ঠিকানায় .com  ব্যবহৃত হয়েছে কিন্তু এর প্রথম  পৃষ্ঠার নিচে দেখুন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান, ইউনিসেফ এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লিংক দেওয়া আছে। অর্থ্যাৎ এটি ইউনিসেফের অর্থায়নে জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করা। সুতরাং এদের প্রদত্ত তথ্য বিশ্বাসযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য।

 

 

. ওয়েব সাইটের তথ্যের আদি উৎস কোন টি?

অনেক মেডিকেল এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সাইট তাদের প্রদর্শিত তথ্য বিভিন্ন ওয়েব সাইট বা অন্য কোন উৎস থেকে নিয়ে থাকে। সচরাচর সেখানে উৎস উল্ল্যেখ করা থাকে। যদি এমন কোন উৎস উল্লিখিত না থাকে সে ক্ষেত্রে তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।

 

. ওয়েব সাইটটির উদ্দেশ্য কি?

ওয়েব সাইটের উদ্দেশ্য নির্ধারিত হয় এর পৃষ্ঠপোষক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে সামনে রেখে। বেশীরভাগ দায়িত্বশীল ওয়েব সাইটে About The site কিংবা About ইত্যাদি লিংকে এই তথ্য দেওয়া থাকে। অনেক সময় বিভিন্ন পণ্য বিপণনের মাধ্যম হিসাবে ওই পণ্যকে গুরুত্ব আরোপ করে স্বাস্থ্য তথ্য প্রদান করা হয়। সেক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে বিভ্রান্ত না হয়ে যাচাই করা। যেমনঃ মায়া আপা https://www.maya.com.bd/#/about লিংকে গেলে দেখতে পাবেন যে এটি ব্র্যাক, বাংলাদেশ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং রবি এর সহযোগিদায় তৈরি। এটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে লেখা রয়েছে

সুতরাং এটি নির্ভরযোগ্য তথ্যের উৎস হিসাবে বিবেচনা করতে পারেন।

 

. ওয়েবসাইটের সাথে ব্যবহারকারীদের যোগাযোগের মাধ্যমটা কেমন ?

বিভিন্ন ওয়েব সাইট তার ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বিভিন্ন পন্থা বেছে নিয়ে থাকে । এর মধ্যে রয়েছে সাপ্তাহিক, দৈনিক বা মাসিক মেইলিং, অনলাইন চ্যাট কিংবা অনলাইন আলোচনার ফোরাম ইত্যাদি। এগুলোর ক্ষেত্রে দেখে নিতে হবে উত্তর প্রদানকারীর যোগ্যতা, পদমর্যাদা কিংবা কর্মস্থলের বিবরণ  সঠিক ভাবে দেওয়া আছে কি না। পাশাপাশা ইলোচনা ফোরামে উত্তর আদানপ্রদানের জন্য কি ধরণের নিয়ম কানুন মেনে চলা হয় তাও দেখে নিতে হবে। আলোচনায় অংশগ্রহণের পূর্বে পূর্বের আলোচনার বিষয়বস্তু দেখে নিতে পারেন।

 

. মেইলে আসা তথ্য কিভাবে যাচাই করবেন?

কোন কোন ওয়েবসাইট তার গ্রাহকের মর্জি মাফিক দৈনিক, সাপ্তাহিক কিংবা মাসিক ভিত্তিতে ই-মেইল পাঠিয়ে থাকে।এসব ক্ষত্রে কোন ই-মেইল আসলে তার প্রেরকের ঠিকানা বা পরিচয় দেখুন। সন্দেহজনক মনে হলে এড়িয়ে যান । অনেক সময় প্রতারণাকারী কিছু প্রতিষ্ঠান সুকৌশলে ই-মেইল বিভিন্ন অফার, ডিসকাউন্ট ইত্যাদির লোভনীয় অফার দিয়ে আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। একে বলা হয় Phising । টোপ দিয়ে বড়শিতে মাছ ধরার মত ব্যাপার আর কি।

 

. প্রদত্ত তথ্য সর্বশেষ তথ্য কি না?

চিকিৎসা বা স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য খুবই পরিবর্তনশীল। তাই সর্বশেষ তথ্য অবগত হোন। দায়িত্বশীল ওয়েবসাইট গুলো তাদের কন্টেন্ট কিছু সময়ের ব্যবধানে আপডেট করে থাকে। তাই দেখে নিন প্রদর্শিত তথ্য খুব বেশী  পুরোনো কি না। প্রয়োজনে গুগলে অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন।

 

যাই হোক এরকম কিছু কিছু সতর্কতা মেনে নিয়ে একটু চোখ কান খোলা রেখে মস্তিস্কের যথাযথ ব্যবহার করলে নিশ্চিত থাকতে পারবেন।

 
তবে পরিশেষে একটা কথা কখনোই কোন ওয়েব সাইটের তথ্যের আলোকে নিজে নিজে রোগ নির্ণয় গোছের কিছু করে কিংবা রোগ নির্ণয় না করে ওষুধ গ্রহণ করবেন না তাতে খরচ না কমে বড়ং বাড়তে পারে আর সেই সাথে মৃত্যুর আশংকাও বাড়তে পারে

 

তাই রোগাক্রান্ত হলে সরাসরি চিকিৎসক কিংবা নিকটস্থ হাসপাতালে যান।

 

 

লেখকঃ ডাঃ শুভ্র প্রকাশ পাল, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, প্রেষণেঃ ঢাকা শিশু হাসপাতাল।

 

 

 

Ishrat Jahan Mouri: Institution : University dental college Working as feature writer bdnews24.com Memeber at DOridro charity foundation
Related Post