X

আসুন জানি- হোমিওপ্যাথি কি? বিজ্ঞান নাকি প্রতারণা?

হোমিওপ্যাথি- আমাদের আগের প্রজন্মের কাছে এক জনপ্রিয় নাম। তেমনি ক্যাবল টিভি বিজ্ঞাপনের কল্যাণে এটি আবারও জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। সাথে যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রের কিছু আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
যে মুহুর্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পূনঃপূন সতর্কতা জারি করছে হোমিওপ্যাথির বিরুদ্ধে তখনই আমাদের রাষ্ট্র তাকে সরকারী স্বাস্থ্যসেবায় অন্তর্ভুক্ত করে চলেছে।

আসুন জানি- হোমিওপ্যাথি কি? বিজ্ঞান নাকি প্রতারণা?

আধুনিক (এবং প্রাচীন) বিজ্ঞানের মতে কি ব্যাখা পাওয়া যায় আসুন দেখি।

হোমিওপ্যাথি হল এমন এক চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে রোগের সুনির্দিষ্ট কারন, রোগ সংক্রমণ কারী জীবাণু বা উপাদান চিহ্নিত করার পরিবর্তে লক্ষণ মিলিয়ে ওষুধ নির্বাচন করা হয়।

হোমিওপ্যাথির মুলভিত্তি হল, যে উপাদানের প্রভাবে যে রোগ সৃষ্টি হয়, তা অনেক কম/লঘুকৃত মাত্রায় শরীরে প্রয়োগ করলে সেই রোগ বিনষ্ট হয়। যেমন ধরুন, নিশেরা গনরি জীবাণু দিয়ে গনোরিয়া হল, আপনি অত্যন্ত লঘুমাত্রায়/কম পরিমানে নিশেরা গনোরি খেয়ে ফেললেন, গনোরিয়া ভাল! আপনি দিব্যি সুস্থ্য!!
আচ্ছা, আপনার কি মনে হয়? এটা কোন সুস্থ্য স্বাভাবিক মানুষের চিন্তা? বা কোন প্রকার বৈজ্ঞানিক ভাবনা প্রসূত?

পাল্টা প্রশ্ন আসবে, আপনি তাহলে ডা. হ্যানিম্যানের চেয়েও বেশি জানেন?

ভাই, জানা কমবেশি নিয়ে তর্কে যাব না। হ্যানিম্যানের চিন্তা ছিল এরকম হয় কিনা! তিনি এটা নিয়ে গবেষণার চেষ্টা করেছিলেন। আর হুজুগে বাঙালী যেমন তেমন হুজুগে জার্মান, বুঝে না বুঝেই দে দৌড়, সাথে হুজুগে বাঙালী পল্টন আর যায় কোথায়?

হোমিওপ্যাথি ওষুধের উপাদান নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়েছে বিস্তর। বিজ্ঞানীরা তাতে পেয়েছেন কি জানেন? হোমিওপ্যাথি ওষুধ বলে দাবিদার যে উপাদান খাওয়ায় তাতে ওষুধের উপাদান কিছুই নেই, হয় স্রেফ ডিস্ট্রিল ওয়াটার নয়ত এলকোহল!

বিজ্ঞানের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি ৬.০২৩*১০^২৩ টি দ্রাবক (জল/এলকোহল) কণার মধ্যে যদি মাত্র ১ টিও ওষুধের কণা মিলত তবে তাকে দ্রবন বলে মানা যেত, অর্থাৎ তাতে ওষুধ অতি ক্ষুদ্র পরিমানে উপস্থিত বলেও মানা যেত। কিন্তু বাস্তবে তাও পাওয়া যায় নি। তাই বৈজ্ঞানিক মহল একে ওষুধ বলে স্বীকৃতি দিতে নারাজ।
যে রোগ নির্নয় পদ্ধতি একটা ভ্রান্ত ধারনার উপর আর ওষুধ একটা কল্পিত বস্তু। তাকে আর যাই হোক বিজ্ঞান বা চিকিৎসা পদ্ধতি তো আর বলা চলে না!

আমি প্রমান দিতে পারি, অমুকের তমুক সেরেছে!
হ্যা, আপনার কথা বিশ্বাস করলাম। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে বলে প্লেস্যিবো এফেক্ট। অর্থাৎ একজনকে দিলেন প্যারাসিটামল অন্যকে পটেটো চিপস- দুজনেরই জ্বর সারল ৪ দিনের মাথায়।

তাহলে পটেটো চিপস দিয়ে রোগ সারছে?
তা নয়। বরং, অনেক রোগেরই একটা সেলফ লিমিটেশন আছে। মানে একটা পর্যায়ে যেয়ে রোগ নিজেই দূর্বল হয়ে পড়ে এবং শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কাছে নতি স্বীকার করে।
এর সংখ্যা কম নয়।

দেখবেন হোমিওপ্যাথ রা বেশি চিকিৎসা করে হেপাটাইটিস, জন্ডিস, অর্শ, লিউকোরিয়া এসব রোগ। যার প্রতিটিই একটা নির্দিষ্ট সময়ে ও হারে সেলফ লিমিটিং। মানে নিজ থেকেই ভাল হয়ে যায়।
তাহলে হোমিওপ্যাথি, খেলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা হল, হোমিওপ্যাথির ভরসা আপনার সত্যিই কোন রোগ থাকলে তাকে বাড়তে বাড়তে চুড়ান্তে নিয়ে যাবে।
তাই, সত্যকে জানুন। বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হবেন না। তারপর জ্ঞান, বুদ্ধি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত আপনার।


ডা. অনুপম দাস,
জনস্বাস্থ্য গবেষণা চিকিৎসক

drferdous:
Related Post