X

আমার করোনা কাল!

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৬ মে ২০২০, শনিবার
ডা. সিনহা মনসুর, এমডি
এনেস্থেসিওলজিস্ট, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টার

নিউইয়র্ক লকডাউনের আগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত একটানা কাজ করে যাচ্ছি! সবার জন্যে যা লকডাউন, আমার জন্যে তা ছিল লাগাতার কাজ।হাসপাতাল-বাসা, বাসা-হাসপাতাল এই আমার প্রাত্যহিক রুটিন। মাঝে মাঝে মনে হয়:
‘রাধা আমার রাধা
জীবনটা যে হাসপাতালেই বাঁধা’!

আমি পেশায় এনেসথেসিওলজিস্ট। হাই রিসক ফর করোনা! তাই বাসায় আছি সেলফ আইসোলেশনে। বাসার একতলায় আমার রুম। স্ত্রী’র সাথে কথা হয় টেলিফোনে। ছেলেদের সাথে কথা হয় একতলার সিঁড়িতে দাড়িয়ে! ওরা সবাই থাকে দোতালায়। একতলায় আমার সঙ্গী নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, ফেসবুক আর অগণিত বই! মাঝে মাঝে মিডিয়াতে কথা বলি।

মাঝে মাঝে দু:স্বপ্ন দেখি। আ.সি.ইউ তে আমি শুয়ে আছি। প্রচন্ড শ্বাস কস্ট! ঘুম ভেঙে যায়। শ্বাস নিতে দরোজা গলিয়ে ব্যাক ইয়ারডে চলে আসি! ব্যাক ইয়ারডে সুনসান নীরবতা। রাতের তখন দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রহর! গাছের পাতায় ঝির ঝির। প্রান ভরে শ্বাস নেই! বুঝে উঠতে পারি না কোনটা স্বপ্ন আর কোনটা বাস্তব! কি অদ্ভুত এই যাপিত জীবন!

আমার কোন উপসর্গ ছিল না। তারপরেও আজ সকালে মুখোমুখি হলাম করোনা টেস্টের! নার্স দু’নাক থেকে স্পেসিমেন নিল। বললো, দেড় ঘন্টার মধ্যেই ফলাফল জানাবে। এই দেড় ঘন্টাকে মনে হলো দেড় যুগ। কথা ছিল ওই আমাকে ফোনে জানাবে। দেড় ঘন্টা পরেও ও আমাকে কল দেয়নি! তাই আমিই ওকে কল দিলাম। ও বললো: “তুমি লাইনে থাকো, আমি কম্পিউটারে রেজাল্টটা পুল করি।”
আবারও প্রতীক্ষা! মানব জীবন প্রতীক্ষার! আমরা কেউই কোন কথা বলছি না। ওপাশ থেকে কম্পিউটারের খট খট শব্দ শুনছি! প্রতিটি মুহূর্ত যেন এক যুগ।

নীরবতা ভেঙে ও বললো: “নেগেটিভ!”
আমি বললাম: “আলহামদুলিল্লাহ্!”
ও বললো: “কিছু বললে!”
আমি বললাম: “গড ইজ কাইনড! তোমার সাথে পরে কথা হবে! থ্যাংকস!”

Platform:
Related Post