X

অপূর্ণ পূর্ণতা ২ – সুমাইয়া সুগন্ধি।

প্ল্যাটফর্ম সাহিত্য সপ্তাহ -৪৫

|| অপূর্ণ পূর্ণতা ২ ||

লেখক – সুমাইয়া সুগন্ধি।
শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ।
৩য় বর্ষ

“জানি না আজ কথা গুলো কেন লিখছি, কিভাবে লিখছি।।

আমি আদৌও জানি না একথা গুলো লিখে কোন লাভ হবে কিনা??

আচ্ছা, লাভ – লোকসানের হিসেব করে কি প্রেমে অংকটার সমাধান হয়? নাকি কেবল চক্রবৃদ্ধি হারে, না পাওয়ার বেদনাটা বাড়ে!!

জানি নে, জানতে ইচ্ছে হয় না!! জানতে ভয় হয়…
আমার অসম্ভব ভয় হয়, যদি আমার অবুঝ মনের ব্যকুল আবেদন বুঝতে পেরে, তুমি আমার দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে যাও? আমি যদি আর তোমার মায়ামাখা মুখখানা দেখতে না পারি!!

তাই আমার দাম্ভিক সাহসিকতার গাম্ভীর্যকে চাদর দিয়ে মুড়ে, ভীরু বেশে, আঁড় চোখে শুধু তোমাকে দেখি।।

আমি মুগ্ধ হই তোমার চোখের সরলতায়।।

আচ্ছা, তোমার সরল চোখ কি জ্যোৎস্নার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়!!? তোমার কি চাঁদ দেখতে ভালো লাগে?

আমার বড্ড শখ, এক ভরা জ্যোৎস্নায় খোলা আকাশের নিচে তোমার পাশে বসে থাকব।

তুমি চাঁদ দেখবে,
আর
আমি দেখব তোমায়।।
চাঁদের আলো তোমায় অসম্ভব রহস্যময়ী করে তুলবে। সেই রহস্য সমাধানের বৃথা চেষ্টা করব আমি, চুপিসারে।।

অনেক চেষ্টার পর সমাধানের ফলাফল হবে শুণ্য

শূন্য
শূন্যতা
শূন্যবোধ ।।

আমার ভয়, এই শূন্যবোধ, হয় আমাকে মহামানবে উত্তীর্ণ করবে নতুবা আমাকে ঠেলে দেবে মহাপ্রলয় ধ্বংসের দিকে।।

মহামানব কিংবা মহাপ্রলয় হবার আগে এই এলোমেলো সমস্যার একটা সমাধান প্রয়োজন।

আমার কাছে এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে
একগুচ্ছ কাঠগোলাপ আর একগোছা রেশমি চুড়ি।

স্বচ্ছ নীল রেশমি চুড়ি আমি আগেই কিনে রেখেছি, শুচিতা।

এখন শুধু কাঠ গোলাপের আপেক্ষা।। ”

একটুকু পড়ে কেমন একটা অস্থিরতা শুরু হয়ে গেল শুচিতার মস্তিষ্কে। ডাইয়েরীর সামনের পাতা গুলো পড়ার জন্য অসহ্য আগ্রহ কাজ করছে তার এখন।।

কিন্তু এভাবে আরেক জনের দিনলিপি পড়া কি ঠিক হচ্ছে?
যার ডাইয়েরি, তাকে তো ঠিক মত চেনেও না সে।
কি জেনো নাম ছেলেটার?
র দিয়ে শুরু, রাফাফ কি রাহাত??

উফ, মনেও পড়ছে না! ৫ বছর একসাথে ক্লাস করার পরও যদি একজন ব্যাচমেটের নাম ঠিক মত মনে না করতে পারে তাহলে আর যাই হোক ডাক্তার হবার যোগ্যতা নেই তার!!

শুচিতার অবচেতনাটা যে কিনা, প্রায়শই আবোল তাবোল কথা বলে।

নাম মনে রাখার সাথে ডাক্তার হবার কি সম্পর্ক?
৫ বছর তো শুচিতা সারির প্রথম বেঞ্চে বসে ক্লাস করেছে, ব্যাক বেঞ্চার দের খবর তার না জানাটাই স্বাভাবিক।।

শুধু জানে, ছেলেটার নাকি প্রত্যেকটা প্রফে সাপ্লি আছে, এইবার ফেল করলে একবছর জুনিয়র হয়ে যাবে সে।
এই তথ্যটাও সে জেনেছে হাসপাতালে আসার পরে।

আরোও বেশ কিছু তথ্য শুচিতার কানে এসেছে
, যেমন বাসা থেকে প্রচন্ড চাপ দিতো ছেলেটাকে। রেজাল্ট নিয়ে অনেক রকম কথা শুনাতো।
এমন না যে ছেলেটা লেখাপড়া করত না। অনেক পড়ত! কিন্তু পরীক্ষার টেবিলে কেমন জানি খেই হারিয়ে ফেলত, সেটা হোক আইটেম অথবা প্রফ।।
তাকে নিয়ে লোকসমাজে নাকি বেশ বিড়ম্বনায় পড়তেন মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল বাবা আর ৩ প্রফে প্লেস করা বড় ভাই।

ছেলেটা নাকি ক্যাম্পাসের সবার হাসির পাত্র ছিলো।। সিনিয়র, জুনিয়র, ব্যাচমেট এমনকি শিক্ষকরাও মজা লুটতো তাকে নিয়ে!

কি আশ্চর্য! এসবের কিছুই জানতো না শুচিতা।।

আসলে ক্যাম্পাসের অনেক কিছু জানে না সে, পড়ালেখা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। এই ব্যস্ততা আরোও বেড়েছে ২য় প্রফে প্লেস করার পর থেকে। তার কলেজ, তার কাছ থেকে অনেক কিছু আশা করে।।
বেশ দায়িত্ববান মেয়ে হিসেবেও শুচিতার নাম ডাক আছে।।

মনে হয় এই কারণেই বুঝি সুইসাইড attempt করা ছেলেটার বস্তা মার্কা ব্যাগের ভিতর থেকে কিছু একটা খুঁজে বের করার দায়িত্বটা আপাতত তার উপরই পড়েছে। সেটা হতে পারে বড় ভাইয়ের ফোন নাম্বার কিংবা বাসার ঠিকানা।।

অবশ্য শুচিতাকে দায়িত্বটা না দিয়েও শামীমের কোন উপায় ছিলো না। কারণ ঈদের ছুটিতে ক্যাম্পাস প্রায় ফাঁকা।

এর উপরে একপাতা সেডিল খাওয়া ছেলেটাকে লাইব্রেরিতে পাওয়া গেল।
মেয়েদের হল কাছে থাকায় রাত ৮ টার ট্রেনের মায়া ত্যাগ করে হাসপাতাল করিডরে এসে উপস্থিত হতে হয়েছে তাই শুচিতাকে।।

ব্যাগ হাতানোর অভুদ্ভ দায়িত্ব শুচিতাকে দিয়ে এদিক ওদিক অস্থির ভংগিতে ছুটছে শামীম। ফোনে কথা বলছে মাঝে সাঝে। মন হয়ে লোকাল ফ্রেন্ডদের সাথে অথবা হলের ছেলেদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে।।

এগুলো এখন আর ভালো লাগছে না শুচিতার। ডায়েরির পাতাটা পড়ার পর থেকেই মনে হচ্ছে কে জেনো শক্ত করে চেপে ধরেছে তার গলা, নিঃশাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, দম বন্ধ হয়ে আসছে তার।

না, এখন এগুলো অনুভব করার সময় না। শুচিতা নামে বাংলাদেশেই হাজার খানেক মেয়ে আছে। অঝথা গিলটি ফিল না করলেও চলবে।।

ভোঁতা অনুভূতি গুলোকে একপাশে রেখে অর্পিত দায়িত্বে আবার মনোযোগ দিল শুচিতা।

 

Mahbubul Haque:

View Comments (21)

Related Post