X

অন্তরালের গল্প || পর্ব-২ “বুমার রিমুভার”

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৯ জুলাই ২০২০, রবিবার

ডা. তৌফিকুল হাসান সিদ্দিকী 
কমান্ড্যান্ট, সিএমএইচ ঢাকা

রাত নেমেছে হাসপাতালের আঙ্গিনায়। এলইডি লাইটের উজ্জ্বল আলো বিষণ্ণতাকে দূরে সরাতে পারছে না। মরচুয়ারীর উজ্জ্বল আলোতে বিষণ্ণ রমনী দাঁড়িয়ে তার অনাগত শূন্যতার দিকে তাকিয়ে। কিছুক্ষণ আগে তার গুমরে উঠা বিলাপ ধ্বনি ছড়িয়ে ছিল হাসপাতাল জুড়ে। নিঃসঙ্গ কুকুরটিও গলা মিলিয়েছিল তার সঙ্গে।

হাসপাতালের একদল কর্মী তাদের কাজ শেষ করেছে। সমস্ত শক্তি, মেধা দিয়ে তাদের ঘাম ঝরিয়েছে জীবনকে ধরে রাখবার অক্লান্ত প্রচেষ্টায়। ব্যর্থ হয়ে যায় মাঝে মাঝে অথবা প্রায়শই এখন।

নিঃসঙ্গ রমণীর কান্না তাই। অনাগত দিনের শূন্যতা তাকে গ্রাস করে ফেলে।
হাসপাতালের আরেকদল কর্মী, যারা কাজ শুরু করেছে চিকিৎসা শুরু হবার আগে থেকেই, তারা এখন আবার ব্যস্ত হয়ে যাবে শবদেহ নিয়ে…
এভাবেই চলে হাসপাতাল।

বিষণ্ণতা সংক্রামক। পিতৃহারা, মাতৃহারা, স্বজনহারার বিষণ্ণতা হাসপাতালের সবাইকে একসময় সংক্রমিত করে ফেলে। স্বাভাবিক সময়ের চাইতে বর্ধিত শবদেহের মিছিল তাদেরকেও আক্রান্ত করে।

কোভিড-১৯ সমস্ত কিছুকে পাল্টিয়ে দিয়েছে। হাসপাতালে মৃত্যুহার স্বাভাবিক সময়ের চাইতে বেড়েছে। বয়স্ক মানুষদের মৃত অবস্থায় হাসপাতালে (Brought in dead) আসার সংখ্যা বেড়ে গেছে। পশ্চিমা দুনিয়া মিম বের করেছে কোভিডকে “বুমার রিমুভার” বলে। বয়স্ক মানুষরা চলে যাচ্ছেন হঠাৎ করেই। আক্রান্ত হবার কিছুদিনের মধ্যেই হঠাৎ কার্ডিয়াক এরেষ্ট, ব্যাখা নেই। “হ্যাপি হাইপোক্সিয়া”, ব্যাখা নেই। হ্রদরোগে আক্রান্ত অথবা হঠাৎ  করে গ্যাংগ্রিন শুরু, অনেক কিছুরই ব্যাখা এখনো নেই। কোন চিকিৎসা সর্বোত্তম হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই…!

‘অতিরিক্ত মৃত্যুর’ (Excess death) হার বেড়েছে নিশ্চিত ভাবে। অধিকাংশ দেশ বা হাসপাতাল এই সংখ্যা প্রকাশ করতে আগ্রহী নয় বিভিন্ন কারনে। অসম্পূর্ণ ডাটা অথবা অসম্পূর্ণ রিপোর্টিং একটা কারণ হতে পারে। সহজ করে ‘একসেস ডেথ’ বের করা যায় এভাবে, যদি ধরি জুন মাসে হাসপাতালে অতিরিক্ত মৃত্যুর সংখ্যা বের করতে চাই, তবে এই মাসের মৃত্যুর সংখ্যাকে গত পাঁচ বছরে জুন মাসের গড় মৃত্যু থেকে বাদ দিলে অতিরিক্ত মৃত্যু সংখ্যা পাওয়া যাবে।

আমি জানিনা এই সংখ্যা অতিরিক্ত কিনা। পরিসংখ্যান নেওয়া হয়নি। কিন্তু বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে।
যারা চলে যাচ্ছেন তারা “বুমার” জেনারেশনেরই বেশী মনে হয়..আমিও ‘বুমার’!

কোভিড যে ভাবে চরিত্র পরিবর্তন করছে তাতে Gen Y (Generation Y) বা Gen Z (Generation Z) এর আশাবাদী হওয়ার খুব কিছু আছে বলে মনে হচ্ছে না…!

সবাই সাবধান থাকি, নিরাপদ থাকি…!

Sarif Sahriar:
Related Post