X

অদৃশ্য হীরোরা

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২০ আগষ্ট, ২০২০, বৃহস্পতিবার 

ডা. বি এম আতিকুজ্জামান
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ,
২৮ তম প্রজন্ম

অনেকদিন পর এমিলিকে দেখলাম আজ। আমাদের সার্জারী সেন্টারে কাজের ফাঁঁকে এককাপ চা নিয়ে অবসর নেবার জায়গায় বসতেই তাকে চোখে পড়লো। এমিলি তার ভ্যান থেকে নেমে নিজেই কয়েকটা বাক্স পুলিতে তুলে আমাদের সেন্টারের দিকে আসছে। আমাকে হ্যালো বলতেই জিগ্যেস করলাম কেমন আছে সে, অনেকদিন দেখা হয়নি।

এমিলি জানালো তার মা জুনের শুরুতেই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থাকার পর মৃত্যুবরণ করেছেন। সে তার মাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। আমি দু:খপ্রকাশ করলাম। সে ধন্যবাদ জানিয়ে তার কাজে ফিরে গেলো।

এমিলি একজন অসাধারন মহিলা। আমি তাকে চিনি গত সতের বছর ধরে। একজন নার্স হিসেবে সে হাসপাতালে কাজ করতো। আমাদের অস্ত্রোপ্রচার রুমের একজন অপরিহার্য অংশ ছিলো সে। একদিন শুনলাম সে আর কাজ করবে না। সে মেডিকেল সাপ্লাইয়ের একটি ব্যবসা খুলেছে। নিজের ছোট ব্যবসা। হাসপাতাল বা সার্জারী সেন্টারে সেগুলো বিক্রি করে সে। নিজের বাড়ির গ্যারেজ হলো তার গুদাম। নিজেই ভ্যান ড্রাইভ করে, নিজেই ডেলিভারী করে – ওয়ান পারসন শো।

এমিলিকে দত্তক নিয়েছিলেন এলিজাবেথ। এলিজাবেথ বিয়ে করেননি। এমিলি তার বোনের কন্যা। একটি সড়ক দূর্ঘটনায়  তার বাবা মা দুজনেই মারা যায়। এলিজাবেথই নিজ সন্তানের মতো তাকে বড় করেছেন। এলিজাবেথ আমার রোগী ছিলেন। গত দুবছর ধরে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতে গেলেও, করোনাকে হারাতে পারলেন না।

এমিলি বিয়ে থা করেনি। মাকেই দেখাশুনা করতো সে। নিজের ব্যবসায় ভালো মুনাফা হয়। মা মেয়ে মিলে বেশ ভ্রমণ করতো তারা। এমিলি নি:সন্দেহে খুব নিঃসঙ্গ। তারপরেও জীবন থেমে নেই। হাসপাতাল আর সার্জারী সেন্টারে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সরবরাহ করে এ মহামারীর সময়েও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সচল রেখেছে এমিলিরা।

এমিলিরা সুপারহিউম্যানের মতো নীরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে। ওরা নিজেদের হিরো বলে দাবী করে না। স্বীকৃতিও চায় না। আমি সবসময় কেবল ধন্যবাদটুকু দেই ওঁকে।

এমিলি হেসে বলে,

‘লিভিং দি ড্রীম, ডক্টর।’

Gowri Chanda:
Related Post