X

James P. Grant School of Public Health-এ ভর্তি পদ্ধতি

জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথ, ব্র্যাক ইউনিভারসিটির পাবলিক হেলথ বা জনস্বাস্থ্য বিভাগের নাম। বিশেষ করে লেখাপড়ার মানের জন্য এই স্কুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশের যেকোন পাবলিক হেলথ স্কুলের চেয়ে জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথের ফ্যাকাল্টি অনেক বেশি সমৃদ্ধ। রিচারড ক্যাশ, অ্যালেনা এডামস, স্তিফেন লুবির মত বিশ্বখ্যাত গবেষকরা ক্লাশ নেন। ক্লাশ নেন আইসিডিডিআরবির সেন্টার ডিরেক্টররা। ক্লাস নেন ব্র্যাকের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এখানে প্রচুর ফিল্ড ভিজিট হয়। এখান কোর্সের ২য় দিনেই ফিল্ড ভিজিটে যেতে হয়। ২০০৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের নিউজ বুলেটিনে  জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথকে উন্নয়নশীল বিশ্বের সেরা ৬ টি পাবলিক হেলথ স্কুলের একটি হিসেবে সম্বোধন করে। এই স্কুলে বাংলাদেশী ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থী পড়াশুনা করতে আসেন। এর ফলে গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাসরুম। এই স্কুলের ভর্তির নিয়ম এবং পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকে জানতে চাচ্ছেন। তাদের জন্য সহজ করে লেখা হল প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে। জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথে সাধারণত কোন সেশনের ভর্তি পরীক্ষার সার্কুলার দেওয়া হয় আগের বছরের জুন/জুলাই মাসে। অনলাইনে আবেদন করতে হয়। ভর্তি পরীক্ষা হয় নভেম্বরের দিকে।

 

 প্রতিটি পরীক্ষায় থাকে তিনটি অংশঃ

১। লিখিত পরীক্ষা

২। গ্রুপ ভাইভা

৩। একক ভাইভা

প্রতিটি ধাপ নিচে বর্ণনা করা হল।  

১। লিখিত পরীক্ষাঃ আবেদনকারীর মধ্য থেকে বাছাই করে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আহ্বান করা হয়। লিখিত পরীক্ষা হয় অনেকটা জিআরই পদ্ধতিতে। এখানে থাকে গণিত এবং ইংরেজি ভাষার দক্ষতা যাচাই করা হয়। জিআরইর প্রস্তুতি থাকলে এতে সুবিধা হয়। আর থাকে একটি কম্প্রিহেনশন রাইটিং। সেখানে একটি সমস্যা (সাধারণত জনস্বাস্থ্য বিষয়ক) দেওয়া থাকে। সেটার আলোকে লিখতে হয়।

২। গ্রুপ ভাইভাঃ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে পরের ধাপ গ্রুপ ভাইভাতে অংশ নিতে হয়। গ্রুপ ভাইভাতে ৬/৭ জন করে একটি গ্রুপ করা হয়। সেখানে একটি জনস্বাস্থ্য বিষয়ক টপিক দেওয়া হয়। নিজের মতামত প্রকাশ করতে হয়। সাথে গ্রুপের কারও মতামত যদি সমর্থন বা বিরোধিতা করতে হয়, কেন করছেন সেটা জানতে চাওয়া হয়। এখানে নিজের মুখ ফুটে কথা বলাটাই বেশি জরুরি এবং অনেকের ভিতর নিজেকে প্রকাশ করতে পারাটা বেশি দরকার।

৩। একক ভাইভাঃ গ্রুপ ভাইভাতে উত্তীর্ণ হলে একক ভাইভাতে অংশ নিতে হয়। এখানে নানা প্রশ্ন থাকে। আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড, কেন জনস্বাস্থ্যে পড়াশুনা করতে চান, জনস্বাস্থ্য পড়ে কি করবেন এইসব বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হয়।  জনস্বাস্থ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকলে এখানে সেটা সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করা হয়। মনে রাখবেন জনস্বাস্থ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতা আপনাকে ভর্তি পরীক্ষায় অনেক কাজে দিবে।

স্কলারশিপঃজেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথের টিউশন ফি তুলনামূলকভাবে বেশি। বর্তমানে ন্যাশনাল স্টুডেন্টদের জন্য সাড়ে সাত লাখ টাকা। তবে এখানে স্কলারশিপের ব্যবস্থা আছে। স্কুলের নিজস্ব কিছু স্কলারশিপ রয়েছে। ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করলে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে পূর্ণ বা অর্ধ স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এছাড়া  বিশ্ববিখ্যাত কিছু সংস্থার স্কলারশিপ থাকে। যেমন ২০১২ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত  যুক্তরাষ্ট্র সরকার যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএআইডি) মাধ্যমে ‘ডেভেলপিং দি নেক্সট জেনারেশন অব পাবলিক হেলথ এক্সপার্টস ইন বাংলাদেশ’ প্রকল্পের আওতায় ৭৯ জন শিক্ষার্থীকে  স্কলারশিপ (পূর্ণ বা আংশিক) দেওয়া হয়েছিল। বর্তমানে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিডিআর স্কলারশিপ। দেশী বিদেশী শিক্ষার্থী এই স্কলারশিপ পেতে পারেন মেধার ভিত্তিতে। কিন্তু সবাই এমন সৌভাগ্যবান নাও হতে পারেন। সে কথাটা মাথায় রাখতে হবে।গত ১২ বছরে এই স্কুল অনেক জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীর জন্ম দিয়েছে। লাইবেরিয়ার ইবোলা সংকটে অসাধারণ ভূমিকা রাখা মিয়াটা গাবানি এই স্কুলের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। এখানে লাইবেরিয়াকে ইবোলামুক্ত করার তার ভাষণটা দেখা যাবে (https://www.youtube.com/watch?v=hhx4L2MDTBQ)।ব্র্যাক এবং আইসিডিডিআরবিতে কর্মরত অনেক তরুণ গবেষক এখান থেকেই জনস্বাস্থ্য বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন।

জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ডা আয়েশা সানিয়া হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ স্কুলে পিএইচডি করেন। বর্তমানে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট ডক্টরাল করছেন। একই ব্যাচের ডা রুমানা জেসমিন খান ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এপিডেমিওলজিতে পিএইচডি করেন।

বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের বেথেসডাতে তিনি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেলথে গবেষক হিসেবে কর্মরত। এছাড়া দ্বিতীয় ব্যাচের ডা মুহাম্মদ আজিজ রহমান অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ এডিলেড থেকে তিনি পিএইচডি অর্জন করেন। চতুর্থ ব্যাচের ডা তৌফিকুল জোয়ারদার ডক্টরাল অফ পাবলিক হেলথ সম্পন্ন করেন জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লুমবারগ স্কুল অফ পাবলিক হেলথ থেকে। বর্তমানে তিনি জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অফ পাবলিক হেলথে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত। এই রকম বহু চিকিৎসক এখান থেকে লেখাপড়া করে দেশ বিদেশে স্বপদে কাজ করছেন।

 

আপনার স্বপ্নের দ্বার খোলার চাবি আপনার হাতে।

Sairee:

View Comments (7)

Related Post