ডা. মো. এবাদুল্লাহ, প্রায় বিনামূল্যে ৪০ বছর ধরে সাতক্ষীরায় চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
সাতক্ষীর রিকশাচালক শিবপদ রায় বলেন, ‘আমি এবং আমার
পরিবার প্রায় ৩০ বছর ধরে তার কাছে চিকিৎসা নিচ্ছি। তিনি সব রোগীর ভালোভাবে চিকিৎসা করেন।’
সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এবাদুল্লাহ বলেন, ”মধ্যবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। ১১ভাই-বোনের তিনি ছিলেন সবার
বড়। পড়ালেখার ভালো হওয়ার তার দায়িত্ব নিয়েছিলেন তার দাদা নওয়াব আলী। দাদা বলেছিলেন, ‘মানুষের জন্য ডাক্তার হও। ডাক্তার হয়ে ব্যবসা না করতে।’
দাদার সেই কথাকে মনে রেখে মাত্র ৫ টাকা ফি নিয়ে প্রায় ৪০ বছর ধরে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন তিনি। তার
ক্লিনিকের নামও দিয়েছেন দাদার নামে। ‘নওয়াব ক্লিনিক’।
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার হামিদ আলী হাইস্কুল থেকে ১৯৬৮ সালে প্রথম শ্রেণিতে এসএসসি পাশ করেন। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭০ সালে খুলনার বিএল
কলেজ থেকে এইচএসসি পরীরক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পড়ালেখা বাদ দিয়ে ফিরে আসেন নিজের এলাকায়। যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযোদ্ধাদের
চিকিৎসা করতেন এবং তাদের সঙ্গে ঘুরেছেন বিভিন্ন জায়গায়।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ফিরে যান রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে।
১৯৭৭ সালে এমবিবিএস পাশ করেন। ইন্টার্নি শেষে সহকারী সার্জন হিসেবে রাজশাহী মেডিক্যালেই যোগ দেন। পরে ১৯৮০ সালে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য কম্পপ্লেক্সে পল্লী চিকিৎকদের
ট্রেনার হিসেবে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সাতক্ষীরা সিভিল
সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১০ সালে তিনি
অবসরে যান।
গরীব মানুষের কাছে টাকা নিতে তার বিবেকে বাধে। তার কাছে
সেবাই পরম ধর্ম। সমাজের সব শ্রেণির মানুষই যেন তার কাছ
থেকে সেবা নিতে পারে সে ব্রত নিয়েই কাজ করছেন।
সব কিছুর দাম বাড়লেও ফি বাড়েনি সাবেক এই সিভিল সার্জনের চিকিৎসা সেবার। ৪০ বছর আগে রোগী প্রতি যে ফি নির্ধারণ করেছেন তিনি এখনও রোগী প্রতি সেই ফি নেন।
তিনি জানান, সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় তিনি অফিস শেষে
দিনের বাকি সময়টা নিজস্ব চেম্বারে ৫ টাকা ফি নিয়ে বিভিন্ন স্তরের মানুষের সেবা দিয়েছেন। যা আজো অব্যাহত রেখেছেন।
সম্প্রতি সেই ফি ৫ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক নার্স স্টাফ কাজ করে তাদের বেতন দিতে হয়। সেসব বিষয় ভেবে ৫ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা ফি করা হয়েছে। এখনও অনেকে ৫ টাকা ফি দিয়ে থাকেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মানুষের কাছে টাকা নয়, দোয়া চাই।
রাস্তায় দেখা হলে আমাকে
সালাম দেয় সম্মান করে এটাই আমার বড় পাওয়া। আমার কাছে চিকিৎসা নিতে আসে ভ্যান চালক, রিকশাচালক, খেটে খাওয়া মানুষ। এদের কাছে টাকা চাইতে খারাপ লাগে, যে যার খুশি মত দেয়।’
ডা. এবাদুল্লাহর কাছে চিকিৎসা নিতে আসা রিজিয়া খাতুন বলেন, এক কথায় তার কাছে আমাদের সমস্যা মেটে। সত্যিই তিনি গরিবের বন্ধু।”
সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. উৎপল কুমার দেবনাথ বলেন, বর্তমান সময়ে ৫-১০ টাকা কিছু না। এটিকে বলা যায় এক প্রকার বিনা পয়সায় চিকিৎসা। তিনি চিকিৎসা সেবাতে যে অবদান রাখছেন তা উজ্জল দৃষ্টান্ত।
View Comments (31)
এই খবরগুলো ফলাও করে প্রচার হয় না কখনো!!
সবার ধান্দা থাকে ডাক্তারদের কিভাবে কসাইরুপে তুলে ধরা যায় মানুষের সামনে!! ?
এত লোভ কিসের উনার?
এখন কিন্তু ফ্রি থেকে ৫টাকা করলে উনাকে পরের দিনেই পেপারে দেখব আমরা
দেশের চিকিৎসা ব্যবস্হা এভাবেই ধ্বংশ হচ্ছে
????
এত্ত মহৎ হওয়ার তো দরকার ছিল না।
দিয়া লাভ কি।তার নিশ্চয়ই কোথাও
লাভ আছে।তাই তো তিনি হলেন
সেই ডাক্তার জাহেদ হাসান।ফ্রি চিকিতসার
কি কোনো মূল্য আছে।
আর কোন কোন পেশার লোকজন ফ্রী বা কম পয়সায় সার্ভিস দেন জানতে চাই।
উনি খুব ভাল একজন মানুষ।লেখার প্রতিটা কথা সত্য। আমি একজন ডাক্তার এবং তাকে খুব ভাল জানি ছোট বেলা থেকে
এরাই আমাদের ডাক্তারদের সর্বনাশের
মুল নায়ক।
কেন এ কথা বলছেন যদি একটু ব্যাখ্যা করতেন। আমি নিজে ও একজন পোষ্ট গ্রাজুয়েট ডক্টর। ধন্যবাদ
এই লোক তো বড় কসাই! রেগুলার ডাক্তাররা পাবলিক কাটে! এই লোক তো অন্য ডাক্তারের ইমেজ কাটতেসে!!! ইনার মনেহয় টাকাপয়সার দরকার নাই, অন্যদের তো আছে! পাবলিকরে ফ্রি দিয়ে বাকিদের সর্বনাশ কেন করছে?
সংসার চলে কিভাবে ?
কিছু বলার নাই।হয়তো কোনো উপায় আছে।
মানবতার জীবন্ত প্রতীক।