X

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার বনাম পুরো বিশ্ব

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩০ মে ২০২০, শনিবার

ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এবং ক্লোরোকুইনকে বেশ কিছু দিন ধরেই করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য প্রতিষেধক বলে মনে করা হচ্ছ।

এর ব্যবহার নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সহ বেশ কিছু দেশের নেতা এর পক্ষে কথা বলেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মে মাসের প্রথম দিকে বলেন, তিনি কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খেয়েছেন তবে পরে তিনি তা খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

তিনি হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা নিয়ে একাধিকবার কথা বলেছেন হোয়াইট হাউজে তার ব্রিফিংগুলোতে এবং তিনি ভারতের কাছ থেকে এই ওষুধ গুলো কিনার কথা বলেছিলেন।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেয়ার বোলসোনারো এক ভিডিওতে দাবি করেন ‍হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সব জায়গায় কাজ করছে। যদিও পরে অবশ্য ফেসবুক ওই ভিডিওটি মুছে দেয়।
কিন্তু এই ওষুধগুলো আসলে কতটা নিরাপদ এবং কার্যকর তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েই গেছে।

এই হাইড্রোক্সি ক্লোরোকুইন কী?

ক্লোরোকুইন ফসফেট ম্যালেরিয়া সারানোর ওষুধ, সিঙ্কোনা গাছ থেকে এর মূল উপাদান পাওয়া যায়। ক্লোরোকুইনের হাইড্রোক্সিলেটেড সল্টকে বলে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন। ভারত সরকার একে প্রোফাইল্যাক্টিক বা রোগ প্রতিরোধে সাহায্যকারী ড্রাগ হিসেবে ব্যবহার করার অনুমোদনও দিয়েছে।

ভারতে কি এটি প্রচুর উৎপন্ন হয়?

এই ওষুধ মূলত ম্যালেরিয়া প্রবণ দেশগুলোতেই মেলে। ভারত ক্লোরোকুইন তৈরিতে বিশ্বের প্রথম সারিতে রয়েছে। এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্লোরোকুইন উৎপন্ন হয় এখানেই। এর আগে আফ্রিকায় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতো।

ট্রাম্পের মন্তব্যের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডাক্তারি প্রেসক্রিপশনে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এবং ক্লোরোকুইনের উপস্থিতি বেড়ে গেছে এবং বিশ্বব্যাপী এর চাহিদাও বেড়ে যায়।

ওষুধগুলো নিয়ে কেন এত আলোচনা? ওষুধের নিরাপত্তাই বা কতোটুকু?

হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ম্যালেরিয়ার চিকিৎসার জন্য নিরাপদ। তা ছাড়া লুপাস বা আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসার জন্যও এটা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু কোভিড -১৯ চিকিৎসায় এর প্রয়োগ নিয়ে কোন ক্লিনিক্যাল জরিপ চালানো হয়নি। কোন পরীক্ষাতে এমন বলা যে হয় নি কোভিড সারাতে হাইড্রক্সি ক্লোরোকুইন ব্যবহার করা যেতে পারে। বৈজ্ঞানিক মহলে এসব ওষুধ দিয়ে করোনাভাইরাসের চিকিৎসার ব্যাপারে উদ্বেগ ক্রমশয়ই বাড়ছে।

এ নিয়ে “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা “বেশ  কয়েকটি জরিপ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এর কারণ হলো হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ওপর চালানো কিছু জরিপে দেখা গেছে এর ব্যবহারের ফলে হৃদপিণ্ডের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন খেয়ে কোভিড-১৯ সারানোর চেষ্টা করার বিরুদ্ধে এর আগে সতর্কবাণীও দিয়েছিল “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা”। এর পরই আরেকটি জরিপে আভাস দেয়া হয় যে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন বরং কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
আর এর পরই “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা” এ নিয়ে জরিপ বন্ধ করে দেবার কথা ঘোষণা করে।

ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নাল করোনা রোগীদের মেডিক্যাল রেকর্ড পর্যালোচনা করে দেখতে পায় এই দুটি ম্যালেরিয়ার ওষুধ খেয়ে কোন সুফল পাওয়া যায় না বরং এতে হৃদপিণ্ডের সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং কিডনি ও লিভারের ক্ষতির মতো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও আছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্লোরোকুইন, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন এবং এ্যাজিথ্রোমাইসিন নামে তিনটি ওষুধ মিলিয়ে একটি এ্যান্টিবায়োটিক ব্যহার করে কোভিড রোগীর চিকিৎসা করা যায় কিনা তার একাধিক পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। এছাড়াও ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকায় একটি জরিপ শুরু হয়েছে যাতে ৪০ হাজার লোককে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, ক্লোরোকুইন অথবা একটি প্লাসিবো দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে কোভিড-১৯ ভাইরাস ঠেকাতে বা যে রোগীরা ইতোমধ্যেই কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এ দুটি ওষুধ কার্যকর কিনা।

নাইজেরিয়ার ওষুধ প্রশাসন বলেছে, তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শের সাথে ভিন্নমত পোষণ করে না তবে তারা স্থানীয় জনগণের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে উপাত্ত সংগ্রহ করতে চায়।

মরক্কো, আলজেরিয়া ও সেনেগাল তাদের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা চালিয়ে যাবার কথা বলেছে। শুধু কেনিয়া বলেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শের পর তারা তাদের জরিপগুলো স্থগিত করছে।

ব্রাজিল সম্প্রতি এ দুটি ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দেবার ক্ষেত্রে ডাক্তারদের উপর যেসব বিধিনিষেধ ছিল তা শিথিল করেছে।

ভারতের সরকার রোগপ্রতিরোধী ওষুধ হিসেবে পুলিশ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার সম্প্রসারিত করেছে তবে তা শুধুমাত্র ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে।

ফ্রান্সের হাসপাতালগুলোতে এই ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল কিন্তু দেশটির চিকিৎসা সংক্রান্ত নজরদারি প্রতিষ্ঠান এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দেবার পরও সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্রের রচয়িতা কোমে গবিনিগি বলেন,

“ক্লোরোকুইন ও হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করতে হলে আরো বড় আকারের এবং উচ্চ মানের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা প্রয়োজন।‍”

তথ্যসূএঃ বিবিসি

Silvia Mim:
Related Post