X

লাইফ ইন লকডাউন, ডে ফোর্টি ওয়ান

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৮ মে ২০২০, সোমবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

বৃষ্টি হচ্ছে। শাফায়াৎ এক দৃষ্টে বৃষ্টি দেখছে। বৃষ্টিই একমাত্র -যার রূপ স্থানে স্থানে বদলে যায়। ঢাকার বৃষ্টি আর জেলা শহরের বৃষ্টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এক হাতে গ্লাস, আরেক হাতে সিগ্রেট। নিজের টাকায় কেনা। অন্যের টাকায় নাকি ‘নেশা’ পুরোপুরি হয় না।

আজ সে এমন কিছু করবে যা সে কখনোই করে নি। নিজেকে নিয়ে ভাববে। সারাটা জীবন সে তাকে নিয়ে অন্যের কমেন্ট শুনেছে। তার মা বাবা, ভাই বোন, বন্ধু বান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী সবার ভাবনা শুনেছে। নিজেকে নিজে কখনো মার্কস দেয় নি। আজ সে দিবে। পাঁচ বছর ধরে ঢাকা আছে। নরম্যাল এমবিবিএস!! সবাই তাই বলে। ইচ্ছে ছিল জেনারেল সার্জারিতে ক্যারিয়ার করার। মনে হয় না আর কখনো চান্স হবে। অনেকবার পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছে। মাঝে বিসিএস এর জন্যও ট্রাই করেছে। প্রিলির গন্ডী পার হয়ে ভাইবা পার হতে পারে নি। শহরের বাইরে একটি ক্লিনিকে যায় ‘খেপ’ মারতে। মালিকের সাথে বনিবনা না হওয়ায় তাও ছুটলো গতকাল। সে খুব আদর্শবাদী ছিল। এখন বুঝে আদর্শ দিয়ে পেট চলে না।

একটা সময় ফেসবুকে খুব একটিভ ছিল। ভাল কিছুর জন্য ফাইট করতো। এখন ফেসবুকও ভাল লাগে না। ফেসবুকে বন্ধুরা আসে পরীক্ষা পাস আর বউ বাচ্চার ছবি আপলোড করতে। সে ক্লান্ত ‘লাইক’ দিতে দিতে। তার কোন আপডেট নেই। কে যেন লিখেছিল- ‘হোঁচট খাওয়া মানে পরে যাওয়া না; হোঁচট খাওয়া মানে পড়তে পড়তে হেঁটে চলা’। ভুল লিখেছে। তার বন্ধু জুনিয়র সিনিয়ররা সবাই স্পেশাল বিসিএস পেয়ে ঢুকে গেছে। সে হোঁচট খেয়েছিল, আর দাঁড়াতে পারে নি!

মোবাইল বাজছে। এক বন্ধুর মায়ের অপারেশন। সে বলেছিল -রক্ত দিবে। মেডিকেল কলেজে থাকাকালীন সে পনেরো বার রক্ত দিয়েছে। কিন্তু এখন আর ইচ্ছে করে না। কেউ তো শাফায়াতের বিপদে আসে নি, সে কেন মানুষের বিপদে যাবে!! বন্ধুর রাস্তা বন্ধু দেখুক! সিদ্ধান্তটা নিয়ে ভাল লাগছে। একটু স্বাধীন স্বাধীন লাগছে। কিছু না হোক, এক দিকে তো সে এগিয়ে। তার কাউকে কেয়ার করতে হয় না!

ফোনটা বাজছেই….

স্বপ্ন মানুষকে বদলে দেয়, ভালবাসা মানুষকে বদলে দেয়, সাফল্য মানুষকে বদলে দেয়; তবে মানুষ সবচেয়ে বেশি বদলায় হতাশায়। এ নিয়ে কেউ কোনদিন লিখে নি কারন মানুষ হেরে যাওয়ার গল্প শুনতে চায় না। যদিও হেরে যাওয়া মানুষগুলোই সংখ্যাগরিষ্ঠ!!

Platform:
Related Post