X

লাইফ ইন লকডাউন, ডে টুয়েন্টি এইট

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৩ মে ২০২০, রবিবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

আজ সারাদিন কাটলো অলস ভাবে বাসায় বসে। বাইরে কী হচ্ছে বোঝা যাচ্ছে না। সরকার সারাদেশেই লকডাউন যথেষ্ট শিথিল করেছে। মানুষের অনুভূতি মিশ্র। আসলে কারো কাছেই কোনো বেটার প্ল্যান নেই।

বেসরকারি ডাক্তারদের ৪০% বেতন কাটা হবে ঘোষণা এসেছে। আমাদের দেশে বেতনের যে রেঞ্জ আর যে উচ্চমূল্য- কিভাবে চলবে জানি না। বাড়িভাড়া আর বাজার খরচ দিলেই তো টাকা থাকে না! তার পরে শিশু বাচ্চার দুধের খরচ আছে। আজ প্যাম্পার্স ডায়াপারের দাম শুনলাম। মনে হলো- এটা বিলাসিতা আমরা যে ফটফট করি। বস্তির আগুন নিয়ে দুঃখে অশ্রুপাত করছি, যেখানে নিজের ঘরই আগুনে পুড়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গা ফাটা মোবাইল, রিস্টার্ট করে চালানো ল্যাপটপ আর ছেঁড়া জুতা কালি করে পরার ইতিহাস- চেপে যাচ্ছি সযতনে। যে অন্যের সাথে প্রতারণা করে সে প্রতারক, যে নিজের সাথে প্রতারণা করে সে খুনী। স্বপ্ন খুনী। আমরা সবাই খুনী।

এক বন্ধু আজ খোলামেলা বললো- ‘দোস্ত আমরা চলব কিভাবে…! ক্লপিড, এটোভা, বাইজোরানের দাম কত জানিস?’ সততা ছাড়া কী মহত্ত্ব হয়! ছেঁড়া সেন্টো গেঞ্জি শার্টের ভিতরে থাকে, ছেঁড়া বেল্ট তো থাকে না। ‘এন 95 মাস্ক কোথায় পাওয়া যায় সে তো বললি, কিন্তু সিমিলাক ২ এর দাম কত জানিস? ভারতীয়টা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না- এর মানে কী বলতে পারবি?’

আসলেই খারাপ অবস্থায় কে নেই। মধ্যবিত্ত যারা ভাল আছে তারা নিজের মাথা পাশা বোর্ডে রেখে তারপর ভাল আছে। দানের অবস্থানে নেই সবাই।

পোভার্টি লাইন থেকে ডিগনিটি লাইন- সীমানা অনেক ছোট। চিকন ড্রেনের মতো। লকডাউন অনেক কিছু আনলকড করেছে। পোভার্টি লাইনটিও সবার জন্য এক নয়। যে স্থানের হাসপাতালে কেউ যায় না সংক্রমণের ভয়ে সেখানে কেউ কেউ যাচ্ছেন রোগী দেখতে। বাড়িতে সবার প্রিয়জন আছে। সেবা মহানুভবতা প্রশংসা শাকের মতন, সবসময় মাছ ঢাকে না।

একটি এন 95 মাস্ক বিক্রি হচ্ছে বারশো টাকায়। অল্টারনেট করে পরতে গেলে অন্তত চারটি লাগবে। প্রথমটি পঞ্চম দিন পরা যাবে। পাঁচ হাজার টাকার মাস্ক নিজ উদ্যোগে কেনা কী সম্ভব সব ডাক্তার সিস্টারের পক্ষে?

সব স্ট্রাগলিং গল্পই সুন্দর যখন তা নিজের জীবনে না আসে। কোভিড উনিশ আমাদের বহির্মুখী না করে অন্তর্মুখী করেছে। যেখানে সবকিছু এলোমেলো হয়ে ছিল। আমরা ঢেকে বসে ছিলাম। ঈদে চারটি গিফট কিনতে হবে- এটি বড়লোকি নয়; স্ট্যাটাস মেন্টেনও নয়। এটি প্রয়োজন। সারা বছর ধরে ক্ষুধার্ত থেকেই এ প্রয়োজনটা তৈরি হয়। একে টুপ করে গিলে ফেলা যায় না।

এ পড়ার জন্যও এ মহা দুর্যোগ নীডেড ছিল। নয়নতারা ফুল দিয়ে প্রকৃতির ভিতরে ঢোকা আর রঙচটা চশমা বেয়ে মানুষের চোখের ভিতরে ঢোকা এক নয়।

Platform:
Related Post