X

লাইফ ইন লকডাউন, ডে এইটি ফোর

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১ জুলাই ২০২০, বুধবার
ডা. শুভদীপ চন্দ

‘যদি আপনার কারো ব্যাপারে কমপ্লেন থাকে সরাসরি তার সাথে কথা বলুন, যদি অনেকের ব্যাপারে কমপ্লেন থাকে শুধু নিজের সাথে কথা বলুন।’ আমি নিজের সাথে কথা বলি। এদেশে অনেকের ব্যাপারে আমার কমপ্লেন।

লঞ্চডুবিতে মারা গেলেন ৩২ জন, কোভিড টেস্ট করতে এখন টাকা পে করা লাগবে, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না কোথাও। মানুষ তাদের দুর্ভাগ্য ও দুর্ভাবনাকে মেনে নিয়েছে। বত্রিশ জন মারা গেলো, ভাবি কেন মারা গেল। লঞ্চে চড়ে ঢাকায় আসছিলো- তাই? মানহীন লঞ্চে চড়েছিলো- সেজন্যে? নাকি বাঁচতে ও বাঁচাতে পারে নি- সেজন্যে? কোথাও কজ আর ইফেক্ট মেলাতে পারি না।

কজ যাই হোক, ইফেক্ট সবসময় সেম। সাধারণ মানুষের উপর দিয়ে যায়। করোনাভাইরাস দেশে আনা, টেস্ট ট্রেস করা, হাসপাতাল বানানো, সুন্দর রেফারাল সিস্টেম করা, চিকিৎসা কর্মীদের সুরক্ষা দেওয়া, লক আনলকের গাইডলাইন বানানো- কোনোকিছুই সাধারণের হাতে নেই। কিন্তু বিপদ সব সাধারণ মানুষদের।

একদিন সময় পার হয়ে যাবে। আমরা অতীতের চোখ নিয়ে এ জলাবদ্ধতা দেখবো। এনজাইটি, ডিপ্রেশন, লোনলিনেস, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং, ইকোনমিক হার্ডশিপ, সারপ্লাস, এংগার, ডু’স এন্ড ডোন্ট’স, প্যারোনিয়া- আমাদের এলবাম হয়ে থাকবে। থাকবে না এখনকার মতো পাশাপাশি দুইটি যুদ্ধ। একদল যুদ্ধ করছে আক্রান্ত থেকে সুস্থ হওয়ার জন্য, আরেকদল যুদ্ধ করছে ছোঁয়া বাঁচিয়ে জীবন যাপন করার জন্য। হয়তো এসব খুঁটিনাটি শেয়ার করার জন্যেও সবাই থাকবো না।

সেদিন রাতের ডিউটিতে এক ব্রট ডেড এসেছিল। খুব কম বয়সী এক মেয়ের। একজন বলছিলো হার্টের সমস্যা নাকি ছিল। ব্রটডেডদের কোনো হিস্ট্রি ডায়াগনোসিস থাকে না। তার আরো ছিল না। কিছুক্ষণ পড়ে ছিল বাইরে ভ্যানের উপর। শরীর তখনো গরম, চোখ দুটো খোলা। আঁখির মতন দুটি তারা যেন শূন্যে ঝুলে আছে।

আকাশে চাঁদ ছিল, মেঘ ছিল, মেঘেদের চলাফেরা ছিল। চাঁদ একটু পরপর মেঘের আড়ালে গিয়ে লুকোচ্ছিল। যেন সে এ ঘটনার কোনো সাক্ষী হতে চায় না। লাশের পাশে কিছুক্ষণ থেকে পৃথিবীর কথাবার্তা শুনলাম। সে নীরবতা ছাড়া কিছুই শোনাচ্ছে না।

ভাবছিলাম- তার থেকে সময়ের গল্প শোনা হবে না আর কোনোদিন! এ রেগুলার কলামও একদিন এভাবে থেমে যাবে।

Platform:
Related Post