X

‘বয়স ১৬, দেখতে ৯০ …

আমরা সবাই কমবেশি জনপ্রিয় মুভি ‘Paa’ দেখেছি। এই মুভিতে অভিনেতা আমিতাভ বাচ্চন অভিনয় করেছিলেন ‘অরো’ চরিত্রে। এই ‘অরো’ চরিত্র টি ছিলো একজন প্রোজেরিয়া রোগাক্রান্ত রোগীর। আজ আমরা জানবো এই প্রোজেরিয়া রোগ সম্পর্কে।

প্রোজেরিয়া ( Progeria) একটি বিরল বংশগত রোগ। এটি এমন একটি রোগ যাতে রোগীর বয়স থাকে ১৬ বছর কিন্তু তাকে ৯০ বছর বয়স্কদের মত দেখায়। এ রোগে বেঁচে থাকার হার ১৭-২০ বছর বয়স পর্যন্ত।

এ রোগে আক্রান্ত বাচ্চাদের মধ্যে রোগের লক্ষণ গুলো জন্ম থেকেই ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। লক্ষণ গুলো হচ্ছে:
– ধীর গতিতে দেহের বিকাশ হওয়া
– বয়স অনুপাতে কম ওজন এবং কম উচ্চতা
– নিচের চোয়াল ছোট থাকে, পাতলা ঠোঁট
– চোখ, মুখের তুলনায় মাথার আকার অনেক বড় থাকা
– কুঁচকানো চামড়া
– চুল পড়ে যাওয়া
– শিরানালী গুলো লক্ষণীয় হবে
– গলার স্বর স্বল্প কম্পাঙ্কের হবে

মোটামুটি ভাবে বলা যায়, এ রোগে আক্রান্ত বাচ্চাদের কে বৃদ্ধদের মত দেখাবে। কিন্তু এদের বুদ্ধিমত্তা স্বাভাবিক থাকবে।

সাধারণত প্রোজেরিয়া আক্রান্ত রোগীদের কিছু সমস্যা নিয়ে জীবন যাপন করতে হয়। যেমন:
– এথোস্কলেরোসিস
– হার্ট ফেইলুর
– দাঁতের সমস্যা বা অস্বাভাবিক দাঁত
– হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া
– শ্রবণ শক্তি কমে যাওয়া

প্রোজেরিয়া রোগীরা সাধারণভাবে পড়াশোনা করতে পারে, কিন্তু কখনো কখনো হৃদরোগ জনিত কারণে স্বাভাবিক জীবন যাপনে সমস্যা হয়। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে তাদের কিছুটা ভালো রাখা যায়।

এ রোগ নির্ণয়ের জন্য একটি জেনেটিক পরীক্ষা করা হয় যা LMNA নামে পরিচিত। এছাড়াও কিছু শারীরিক পরিক্ষা-নিরীক্ষা করে ও এই রোগ নিশ্চিত হওয়া যায়।

এ রোগীদের যে শারীরিক পরীক্ষা করা হয় :
– ওজন ও উচ্চতা পরিমাপ
– গ্রোথ চার্ট
– শ্রবণশক্তি এবং দৃষ্টিশক্তি
– হার্ট রেট, পালস, ব্লাড প্রেশার
– প্রোজেরিয়ার লক্ষণ আছে কিনা সেটা দেখতে হবে।
এক্ষেত্রে রোগীর ইতিহাস (history taking) খুব গুরুত্বপূর্ন। রোগীকে প্রশ্ন করা নিয়ে দ্বিধা করা যাবে না। কারণ যথাযথ হিস্ট্রি বা রোগের ইতিহাস থেকে রোগ নির্ণয় করা এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।

সাধারণত প্রোজেরিয়ার নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। কিন্তু হৃদরোগ এবং রক্তনালির রোগ ( Cardiovascular disease) নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হলে রোগী কিছুটা ভালো থাকে।
নির্দিষ্ট কিছু থেরাপির মাধ্যমে লক্ষণ বা উপসর্গ থাকা সত্বেও রোগী কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এসব রোগীদের সাধারণত প্রতিদিন স্বল্প মাত্রায় এসপিরিন দেয়া হয় যেন হার্ট এট্যাক এবং স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যেতে পারে। রোগীর কোলেস্টেরল, ব্লাড প্রেশার, মাথাব্যাথা এবং হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। রোগীকে উচ্চমাত্রার ক্যালরিযুক্ত খাবার দিতে হবে যেন অপুষ্টিজনিত কোন রোগ না হয়। প্রোজেরিয়াতে সাধারণত দাঁতের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই রোগীকে একজন পেডিয়াট্রিক ডেন্টিস্টের কাছ থেকে যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে। সম্প্রতি প্রোজেরিয়া সোসাইটির গবেষকরা ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত Farnestyltransferase inhibitors যেমন Lonafarnib প্রোজেরিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে সুফল পেয়েছেন। দেখা গেছে এই ঔষধ রোগীর ওজন বাড়িয়ে দেয়।

তবে প্রোজেরিয়া নিরাময়ে কার্যকরী চিকিৎসা বা ঔষধ এখনো আবিষ্কার হয় নি। এখনো গবেষকরা গবেষণা করছেন।

প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটার :
Tahrim Mojumder (Ayesha)
Brahmanbaria Medical College
Session : 2015-16

কৃতজ্ঞতা :
Dr. Shabyasachi Roy Shawon

Mahbubul Haque:
Related Post