X

নিউরোসিস, স্ট্রেস রিলেটেড, ইটিং ও সোমাটোফর্ম ডিজঅর্ডার

Neurosis
কেউ যদি বলে, ‘আমি পাগল!’ তাহলে সেটা neurosis। আর যদি বলে, ‘আমি কিসের পাগল? পাগল তুই!’ তাহলে সেটা psychosis! অর্থাৎ neurosis এ insight ঠিক থাকে। রোগী নিজেই বুঝে তার মানসিক সমস্যা আছে, ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন। অন্যদিকে psychosis এ lack of insight থাকে, অর্থাৎ রোগী বুঝেনা যে তার সমস্যা আছে, তাকে ধরে বেঁধে অনেক সময় ডাক্তারের কাছে নিতে হয়। আজ প্রথমটা নিয়েই অল্পকিছু পড়াশোনা!

১। কিছু ভাল লাগে না।
২। কিছু ভাল লাগে না, আবার অনেক ভাল লাগে।
৩। চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না।
৪। চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না, দরজা মনে হয় খোলা। যাই দরজা লাগিয়ে আসি, কিন্তু দরজা তো বন্ধ! আবার চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না, দরজা মনে হয় খোলা! যাই দরজা লাগিয়ে আসি, এভাবে একই কাজ বারবার চলতে থাকে!

প্রথম দুটো (১ ও ২) ভাল মন্দ লাগা বা mood এর সাথে জড়িত। তাই এ দুটো mood disorder.

প্রথমটার ক্ষেত্রে ভাল লাগে না কখনোই, mood একটাই, তাই এটা unipolar mood disorder, যাকে বলি Depression।
দ্বিতীয়টিতে ভাল না লাগার সাথে, ভাল লাগাও আছে, তাই এটা bipolar mood disorder। এখানে কিছু ভাল লাগে না মানে Depression, আর এই Depression এর পর ভাল লাগার যে সময়টুকু থাকে তা তীব্রতায় অনেক বেশি, যাকে বলে Mania।

পরের দুটো (৩ ও ৪) দুঃচিন্তার সাথে জড়িত। তাই এ দুটো Anxiety disorder.
তৃতীয় ক্ষেত্রে শুধুই দুঃচিন্তা, পুরোটা সময় জুড়ে দুঃশ্চিন্তা, চিন্তার পরে কোন কর্ম বা compulsion নাই। তাই এটা Generalized anxiety।
চতুর্থ ক্ষেত্রে দুঃচিন্তার সাথে, তার সমাধান হিসেবে দরজা বন্ধ করার কর্ম বা compulsion আছে। তাই এটা obsessive compulsive disorder (OCD)।

আরো দুটো anxiety disorder আছে – phobic anxiety এবং panic anxiety। দুটোই কাছাকাছি, এই সব anxiety এর কারণ ভয়। দুটোর মধ্যে সামান্য একটু পার্থক্য আছে।
phobic anxiety এর ক্ষেত্রে phobia মানে ভয়, এই ভয়ের কারণ থাকে। যেমন বাইরে গেলে গাড়ি চাপা পড়ে মরে যেতে পারে, তাই বাইরে যায় না। অন্যদিকে, আমি এখনই মারা যাবো, এই ঘরে বসেই মারা যাবো। কিভাবে মারা যাবো কোন কারণ নাই, আমি মারা যাবোই। মৃত্যু ভয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করবে, এটা panic anxiety বা panic disorder।

সোজা ভাষায় এ চারটাকে একসাথে এক কথায় প্রকাশ করা হল। এবার চিকিৎসা!

চিকিৎসা
সব রোগের চিকিৎসায় কমন যেটা সেটা CBT (Cognitive behaviour therapy), counseling, অর্থাৎ কথা বলে বুঝাতে হবে। আর ওষুধ বলতে মূলত দুটো ক্যাটাগরির, anti-depressant ও anxiolytic.

১। Depression এর চিকিৎসায় anti-depressant।
২। Bipolar mood disorder, প্রথমে mood খারাপ depression তাই anti-depressant. পরে কিন্তু mood ভাল, আবার খারাপ। এই চক্র চলতে থাকে। এই mood swing প্রতিরোধ করতে mood stabilizer।
৩। Anxiety এর চিকিৎসায় anxiolytic। আর আমরা জানি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই anxiety is followed by depression, তাই সাথে anti-depressant।
৪। OCD এর চিকিৎসা কি? মনে হতে পারে, যেহেতু এটাও এক প্রকার anxiety disorder, তাই তার চিকিৎসায় anxiolytic ই দিবো! কিন্তু না। OCD তে রোগীকে বুঝাতে হবে, দরজা দেয়াই আছে, চাবির গোছা সাথেই আছে – বাড়িতে রেখে আসেনি। আর চিকিৎসা হিসেবে compulsion কমাতে দেয়া হয় anti-depressant.

Stress related disorder
১। Acute stress disorder
এক্ষেত্রে বিভিন্ন stress এর কারণে রোগী anxiety তে থাকে। যেমন মন্টু মিয়া ঘুষ খেয়েছিল, দুদক আসবে ধরতে! সেই চিন্তায় তার ঘুম হারাম। ধরা খেলে চাকরী চলে যাবে, খাবে কি তখন, সে চিন্তায় সে কিছুটা হতাশও বটে! এখানে anxiety বেশি থাকে, depression কম থাকে। তাই anxiolytic যথেষ্ট। দুদকে ধরা খেয়ে চাকরী হারালো, depression, তখন anti-depressant!

২। Adjustment disorder
নাম শুনেই বুঝি adjustment এ অসুবিধা। মাখনলাল গ্রামের ছেলে, শহরে এসে ভর্তি হয়েছে। নতুন পরিবেশ, খাপ খেতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা। গাইয়া বলে কেউ কেউ খেপায়ও তাকে, তাই একটু হতাশও লাগে। অর্থাৎ উপরের মত প্রথমে anxiety, পরে depression হতে পারে। ট্রিটমেন্ট তাই আগের মত।

৩। Post traumatic stress disorder
মিতু বাসে একা ছিল। আর একটু হলেই বিপদে পড়তো। ভাগ্যিস লাফ দিয়ে বেঁচে গেছে। কিন্তু ঘটনাটা ভুলতে পারছে না। এই ঘটনা বার বার মনে পড়ে, ভয় পায় (phobic anxiety), তারপর চুপ হয়ে যায় কষ্ট আর হতাশায়। এই কষ্টকর হতাশাই দীর্ঘ সময় ধরে থাকে (depression). ভুলে যায়, মনে পরে, কষ্ট পায়। এই চক্র চলতে থাকে। চিকিৎসা হিসেবে কষ্ট কমাতে তাই anti-depressant দেয়া হয়।

Eating disoder
সমস্যা খাওয়া নিয়ে!

১। Anorexia nervosa
নামে আছে anorexia, অর্থাৎ কিছু খাচ্ছে না মোটা হওয়ার ভয়ে। না খেতে খেতে রোগী তালপাতার সেপাই। যদিও সে বলবে এবং আয়নায় দেখবে সে সুমো কুস্তিগিরের মত মোটা!

২।Bulimia nervosa
খুব বেশি খাচ্ছে, খাওয়ার পর মনে হচ্ছে – হায় হায়, আমিতো মোটা হয়ে যাবো, তাই গলায় আঙুল দিয়ে আবার বমি করে ফেলছে। বারবার বমির জন্য দাঁত ক্ষয় হবে, আঙুলের নাকোলে ক্যালাস জমবে, প্যারোটিড গ্লান্ড বড় হয়ে যাবে।

চিকিৎসা
এসবের চিকিৎসায় ওষুধ প্রয়োজন হলে SSRI দেয়া যায়, এটা serotonin বাড়াবে যা hypothalamus এর appetite centre কে কন্ট্রোল করবে, খাওয়া ও মোটা হওয়া নিয়ে দুঃশ্চিন্তা কমবে!

Somatoform disorder
মনের সমস্যার দেহে প্রকাশ,

১। Somatisation disorder
এ রোগী বিভিন্ন সমস্যা বা symptoms এর কথা বলবে। যেমন চোখে দেখে না, কানে শোনে না, বুকে ব্যাথা, পেটে ব্যাথা, ইত্যাদি। কিন্তু আদতে তার কোন সমস্যা নাই!

২। Hypochondrial disorder
উপরের সাথে এর পার্থক্য হল, ওটাতে শুধু symptoms বললেও, এটাতে বলবে রোগ! যেনতেন রোগ না, ক্যান্সার টিউমার ইত্যাদি, যে রোগে সে অল্প কদিনেই মারা যাবে, তাই নাকি তার তড়িৎ ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন।

৩। Dissociative (conversion) disorder
উপরের দুটোর সাথে এর পার্থক্য হল, ওখানে শুধু বলেছে তার ওই symptoms বা সমস্যা আছে, আর এখানে সমস্যা শরীরে প্রকাশ পাবে। এটা যে সে ইচ্ছা করে করে তা কিন্তু না। যদি ইচ্ছা করে করে, তখন সেটা হবে Factitious disorder বা Malingering. কিন্তু এখানে যেমন তার খিঁচুনি হচ্ছে, যেটা সে নিজে ইচ্ছা করে করবে না, কোন মানসিক কারণে শরীর এই symptoms প্রকাশ করবে, কিন্তু পরীক্ষায় এর কোন শারীরিক কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোন শারীরিক কারণ থাকে না বলে symptoms ও বেশিক্ষণ থাকে না, থাকে না central cyanosis ও tongue bite. কিছুক্ষণ পর এমনিতেই আবার ভাল হয়ে যায়।

চিকিৎসা
CBT, counseling এগুলোই যথেষ্ট।

সকলের মানসিক সুস্বাস্থ্য কামনায়।
ডা. কাওসার উদ্দীন
ঢামেক, কে-৬৫

Platform:
Related Post