X

তবে কী মানব দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমছে?

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার

মানুষের দেহে হাজার হাজার রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলির জন্য তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়৷ এজন্য দেহে এমন একটি বিস্তৃত থার্মোরেগুলেশন সিস্টেম রয়েছে, যা বেশিরভাগ সময় দেহের তাপমাত্রাকে আদর্শের কাছে রাখে।

আমরা সকলে জানি ৯৮.৬˚F শরীরের সাধারণ তাপমাত্রা৷ প্রায় ১৬০ বছর পূর্বে পাওয়া ডাটা নমুনাগুলির অনুসারে সময়ের সাথে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রাও হ্রাস পেতে পারে।

৯৮.৬˚F কোথা থেকে এসেছে?
১৮০০ দশকের মাঝামাঝি এক জার্মান চিকিৎসক, কার্ল ওয়ান্ডারলিক, প্রায় ২৫,০০০ লোকের তাপমাত্রা (বগল থেকে) পরিমাপ করেছিলেন এবং দেখতে পান যে গড় ছিল ৯৮.৮˚F (৩৭˚C) এবং তখন থেকে তাই আমরা বিশ্বাস করছি। তবে আধুনিক গবেষণাগুলি দিয়ে খুঁজে পাওয়া গেছে যে-
• দিনের বেলা শরীরের তাপমাত্রা বেশি পরিবর্তিত হয়।
• এটি ব্যক্তিদের মধ্যেও পরিবর্তিত হয়৷ পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে এবং বয়স্ক লোকের চেয়ে কম বয়সীদের মধ্যে তাপমাত্রা বেশি থাকে। ১৯৩৫ এবং ১৯৯৯ এর মধ্যে ২০টি গবেষণা করে দেখা গেছে যে, গড় মৌখিক (ওরাল) তাপমাত্রা ছিল ৯৭.৫˚F এবং ২০১৭ তে ৩৫,০০০ এরও বেশি লোকের একই ফলাফল পাওয়া গেছে৷ তাই বলা যায় যে, গত দু’শ শতাব্দীতে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিচে নেমে এসেছে।

মানুষ কি শীতল হচ্ছে?

গবেষকরা ১৫৭ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাপমাত্রার রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করেছেন৷ সেখান থেকে দেখা যায় যে :
১৮৬০-১৯৪০: ওয়ার্ল্ড ওয়ারে প্রায় ২৪,০০০ প্রবীণদের বগল এবং মৌখিক তাপমাত্রার পরিমাপ করা হয়েছিল।

১৯৭১-১৯৭৫: দ্যা ন্যাশনাল হেলথ এন্ড নিউট্রিশন এক্সামিনেশন সার্ভে থেকে ১৫,০০০ জনেরও বেশি মৌখিক তাপমাত্রা বিশ্লেষণ করা হয়েছিল।

২০০৭–২০১৭: দ্যা স্টানফোর্ড ট্রান্সলেশনাল রিসার্চ ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেস এনভায়রনমেন্ট থেকে, দেড় লক্ষাধিক মানুষের মৌখিক তাপমাত্রা পর্যালোচনা করা হয়েছিল। বিশ্লেষণ দ্বারা দেখা যায় যে, প্রায় ১৬০ বছরের সময়কালে গড় মৌখিক তাপমাত্রা ধীরে ধীরে এক ডিগ্রীরও বেশি কমে গিয়েছে। ফলস্বরূপ, “নতুন স্বাভাবিক” ৯৭.৫˚F এর কাছাকাছি৷ বয়স, লিঙ্গ, শরীরের আকার এবং দিনের সময় হিসাব করার পরে এই পর্যবেক্ষণটি রাখা হয়েছে।

গড় তাপমাত্রা কেন হ্রাস পাচ্ছে?

দুটি মূল সম্ভাবনা হলো :

• নিম্ন বিপাকের হার: শরীরের তাপমাত্রার এক বৃহত্তম নির্ধারক হলো আপনার বিপাক হার৷ বিপাকীয় হার কম হওয়ার কারণ হতে পারে উচ্চতর দেহের ভর, ভালো চিকিৎসা এবং আধুনিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা৷

• সংক্রমণ এবং প্রদাহের নিম্ন হার: ওয়ান্ডারলিকের দিনে যক্ষ্মা, সিফিলিস শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলতে পারতো। এমনকি অন্যান্য প্রদাহজনক পরিস্থিতি সাধারণ ছিল এবং চিকিৎসা সীমাবদ্ধ ছিল।

কেন শরীরের তাপমাত্রা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ :

শরীরের তাপমাত্রা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যাবশ্যক৷ যেমনটি রক্তচাপ, হার্টের হার এবং শ্বাস- প্রশ্বাসের হার চিকিৎসক দ্বারা পরীক্ষা করা উচিত নাহলে জীবন-  হুমকিসর মুখে পরতে পারে। মানুষের দেহে হাজার হাজার রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলির জন্য তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়। ফলস্বরূপ, শরীর তাপমাত্রায় বিস্তৃত ওঠানামা করে। প্রকৃতপক্ষে, গুরুতর হাইপোথার্মিয়া (কম শরীরের তাপমাত্রা) বা হাইপারথার্মিয়া (উচ্চ দেহের তাপমাত্রা) স্থায়ীভাবে দেহের ক্ষতি বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এজন্য দেহে এমন একটি বিস্তৃত থার্মোরোগুলেশন সিস্টেম রয়েছে, যা বেশিরভাগ সময় দেহের তাপমাত্রাকে আদর্শের কাছে রাখে। সাধারণত তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইটের উপরে থাকলে জ্বর হয়৷ তবে হিট স্ট্রোক বা ড্রাগের প্রতিক্রিয়া সহ অন্যান্য কারণও থাকতে পারে। শরীরের বিপাকীয় হার, সংক্রমণ এবং প্রদাহ সমস্তই মানবস্বাস্থ্য এবং তার দীর্ঘায়ুকে প্রভাবিত করে। সুতরাং, গত দেড় শতাব্দীতে দেহের তাপমাত্রা ক্রম হ্রাসমান গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনগুলির ডাটা রাখা উচিত।

https://www.health.harvard.edu/blog/time-to-redefine-normal-body-temperature-2020031319173?fbclid=IwAR1emem2Jzk8naAEZFTT5WQMR6xUcfGXJdQ0gpxw_6jCa605RdaWhCXlMCA

 

Nusrat Jahan Kheyam:
Related Post