কোন ধাপে কারা পাবেন করোনা ভ্যাকসিন?

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৪শে জানুয়ারি ২০২১, রবিবার

গত ২১ জানুয়ারি ২০২১ (বৃহস্পতিবার) ভারত থেকে শুভেচ্ছা হিসাবে পাঠানো ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি ২৫শে জানুয়ারি ভারত থেকে কেনা আরো ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দেশে আসবে। আগামী ২৭শে জানুয়ারি (বুধবার) করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবদুল মান্নান।

ছবিঃ প্রতীকী

প্রথমদিন ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে ২০- ২৫ জনকে ভ্যাকসিন দেয়ার মাধ্যমে কর্মসূচী শুরু করা হবে। প্রথমে ভ্যাকসিন দেয়া হবে একজন নার্সকে এবং করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়ার এই কার্যক্রম ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ইতোমধ্যেই দেশে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিন দেয়ার কর্মসূচির প্রস্তুতি। খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিন পর্যায়ের পাঁচটি ধাপে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে। প্রথম পর্যায়ে দুই ধাপে ১ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৯ জনকে টিকা দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে মোট জনগোষ্ঠীর তিন শতাংশ বা ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জনকে টিকা দেওয়া হবে। এই তিন শতাংশের মধ্যে রয়েছেন কোভিড- ১৯ চিকিৎসার সাথে সরাসরি যুক্ত ৩ লাখ ৩২ হাজার ২৭ জন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী। তাদের মধ্যে চিকিৎসক, নার্স এবং মিডওয়াইফারি পেশায় নিয়োজিত কর্মী, মেডিকেল ও প্যাথলজি ল্যাব কর্মী, পেশাদার স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্ন কর্মী, সাইকোথেরাপির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা, মেডিসিন পারসোনেল, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ও অ্যাম্বুলেন্স চালকরা রয়েছেন। কোভিড- ১৯ চিকিৎসার সাথে সরাসরি যুক্ত বেসরকারি খাতের ৬ লাখ কর্মীও টিকা পাবেন। আরও পাবেন সরকারি- বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, যারা স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন ধাপে কাজ করলেও সরাসরি কোভিড- ১৯ মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত নন। যেমনঃ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কর্মী, বাণিজ্য কর্মী, ক্লার্ক, লন্ড্রি কর্মী, অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি অন্যান্য গাড়িচালক এমন ১ লাখ ২০ হাজার জনকেও টিকা দেওয়া হবে।

এছাড়া ২ লাখ ১০ হাজার ভ্যাকসিন পাবেন বীরমুক্তিযোদ্ধা, ফ্রন্টলাইনে কাজ করা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, আনসার, ভিডিপিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৯ সদস্যকেও ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সেনাবাহিনী, নেভি, বিমানবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড ও প্রেসিডেন্ট গার্ডের ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯১৩ সদস্যও ভ্যাকসিন পাবেন। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ৫০ হাজার কর্মকর্তা এবং ফ্রন্টলাইনে কাজ করা ৫০ হাজার সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীকেও ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে। প্রথম ধাপে ভ্যাকসিন পাবেন এমপি, সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর, জেলা কাউন্সিল, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভার কর্মী ও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরাও। তাদের সংখ্যা ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৯৮ জন। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ১ লাখ ৫০ হাজার কর্মীকেও ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। ভ্যাকসিন পাবেন ধর্মীয় নেতারা। তাদের সংখ্যা ৫ লাখ ৪১ হাজার। আছেন দাফন ও সৎকারে নিয়োজিত ৭৫ হাজার কর্মী, ওয়াসা, ডেসা, তিতাস ও ফায়ার সার্ভিসের ৪ লাখ কর্মী। স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ১ লাখ ৫০ হাজার কর্মী, প্রবাসী শ্রমিক ১ লাখ ২০ হাজার। ভ্যাকসিন পাবেন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি ৪ লাখ কর্মী। থাকবেন ব্যাংক কর্মী ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ জন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন রোগী ৬ লাখ ২৫ হাজার। জরুরি ও মহামারি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ৭৭ হাজার ৮০৪ কর্মীও প্রথম ধাপে ভ্যাকসিনের আওতায় আসবেন।

প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে ৭ শতাংশ বা ১ কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ প্রবীণরা ভ্যাকসিন পাবেন। তাদের সবার বয়স ৬০ বছর বা এর চেয়ে বেশি। দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি ধাপে ১১ থেকে ২০ শতাংশ বা ১ কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ ভ্যাকসিন পাবেন। এই পর্যায়ে ভ্যাকসিন পাবেন ৫৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী নাগরিক ৫৫ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫৭, কো- মরবিডিটিসহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা বয়স্ক ৩০ লাখ ২১ হাজার ৯৩৬, শিক্ষক ও সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মী ১৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৩, প্রথম পর্যায়ে বাদ পড়া গণমাধ্যম কর্মী ৫০ হাজার, দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী ১০ লাখ ১১ হাজার ২২৮, আদিবাসী সম্প্রদায়ের সদস্য ১০ লাখ, গণ পরিবহন কর্মী ৫ লাখ, হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং ওষুধের দোকানের কর্মী দুই লাখ ৪২ হাজার ৯৬৪, গার্মেন্ট শ্রমিক ৩৬ লাখ, যৌনকর্মী ও তৃতীয় লিঙ্গের এক লাখ ৫০ হাজার সদস্য।

তৃতীয় ও সর্বশেষ পর্যায়ে মোট দুটি ধাপে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২১ থেকে ৪০ শতাংশ বা ৩ কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার এবং দ্বিতীয় ধাপে ৪১ থেকে ৫০ শতাংশ বা ৬ কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তৃতীয় পর্যায়ের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে টিকা পাননি এমন শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ৬ লাখ ৬৭ হাজার ২০৪, অনুমোদন সাপেক্ষে প্রসূতি ৩৮ লাখ ১৫ হাজার ২০১, অন্যান্য সরকারি কর্মচারী ১২ লাখ ১৭ হাজার ৬২ জন।

এছাড়াও আইন প্রয়োগকারী কর্মী ৪৩ লাখ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার ৬ লাখ কর্মী। অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ২২ লাখ, রপ্তানি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মী ২০ লাখ ৮১ হাজার ৮৮৪, বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বন্দর কর্মী ২৫ লাখ, কয়েদি ও জেলকর্মী এক লাখ ৫৮৬, শহরের বস্তিবাসী বা ভাসমান জনগোষ্ঠী ২২ লাখ ৩২ হাজার ১১৪, কৃষি ও খাদ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত কর্মী ১৬ লাখ ৫০ হাজার, ডরমেটরির বাসিন্দা ৫ লাখ, গৃহহীন জনগোষ্ঠী ২ লাখ, অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মী ৫১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৪, বাদ পড়া গণপরিবহন কর্মী ৩ লাখ, বাদ পড়া ৫০ থেকে ৫৪ বছর বয়সী নাগরিক ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩২৩, জরুরি ও মহামারি ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ কর্মী টিকা পাবেন। তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপে অর্থাৎ সর্বশেষ ধাপে টিকা পাবেন বাদ পড়া যুব জনগোষ্ঠী ৩ কোটি ২২ লাখ ৩৪ হাজার, শিশু ও স্কুলগামী শিক্ষার্থী ৩ কোটি ৪৭ হাজার ১৫৭ এবং আগের বাদ পড়া ৮ লাখ ৪২ হাজার ৫৯৭ জন।

উল্লেখ্য, অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের কোভিশিল্ড নামের এই ভ্যাকসিনটি ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট তৈরি করছে এবং বাংলাদেশ সেই প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার জন্য চুক্তি করেছে।

Silvia Mim

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

২৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দেওয়ার কার্যক্রম

Sun Jan 24 , 2021
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২৪ জানুয়ারি ২০২১, রবিবার আগামী ২৭শে জানুয়ারি (বুধবার) থেকে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দেয়ার কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবদুল মান্নান। এর আগে ২০শে জানুয়ারি একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন “প্রথমদিন ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে ২০- ২৫ জনকে টিকা দেয়ার মাধ্যমে কর্মসূচী […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo