X

করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রথম সতর্ক করা সেই চীনা চিকিৎসকের মৃত্যু

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রথম সতর্কবার্তা পাঠিয়ে তলবের মুখে পড়েছিলেন চীনের চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং। পুলিশ তাকে ‘মিথ্যা তথ্য ছড়ানো বন্ধের’ নির্দেশ দিয়ে মুচলেকায় স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। পরে উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কবলে পড়েন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ নিয়েও ছড়িয়েছে বিভ্রান্তি। অবশেষে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সংবাদপত্র পিপল’স ডেইলি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার ভোর ২টা ৫৮ মিনিটে মৃত্যু হয়েছে এই চিকিৎসকের।

বৃহস্পতিবার গ্লোবাল টাইমস, পিপলস ডেইলিসহ চীনের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ৩৪ বছর বয়সী ডা. লি ওয়েনলিয়াং-এর মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টায় তাকে প্রথমে মৃত ঘোষণার খবর প্রকাশ হলে দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবুতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। পিপলস ডেইলি এক টুইট বার্তায় বলে ডা. লি এর মৃত্যু ‘জাতীয় বিষাদে’ পরিণত হয়েছে।

এরপরেই গ্লোবাল টাইমস জানায়, ডা. লি এর অবস্থা গুরুতর। তাকে বিশেষ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এসময় সংবাদমাধ্যমগুলো খবর পরিবর্তন করে ওই চিকিৎসকের চিকিৎসাধীন থাকার কথা প্রকাশ করে। পরে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে পিপলস ডেইলি এক টুইট বার্তায় জানায়, ‘সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে লি সাত ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) ভোর ২টা ৫৮ মিনিটে মারা গেছেন।’ লি ওয়েনলিয়াং এর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একটি টুইটে জানায়, ‘আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে লি’র মৃত্যু সংবাদ জানাচ্ছি। নভেল করোনা ভাইরাস নিয়ে তিনি যে কাজ করে গেছেন এজন্য তাকে আমাদের সবার স্মরণ রাখা উচিত।’

গত বছরের ডিসেম্বরে চোখের চিকিৎসক ডা. লি ওয়েনলিয়াং প্রাথমিকভাবে নতুন ধরনের ভাইরাস সংক্রমণের সাতটি ঘটনা চিহ্নিত করেন। এই ভাইরাসকে তিনি ২০০২-০৩ সালে ছড়িয়ে পড়া সার্স ভাইরাসের মতো বলে ধারনা করেন। সহকর্মী চিকিৎসকদের সংক্রমণ এড়াতে সুরক্ষামূলক পোশাক পরার আহ্বান জানিয়ে গত ৩০ ডিসেম্বর একটি চ্যাট গ্রুপে বার্তা পাঠান ডা. লি ওয়েনলিয়াং।

এর চার দিন পর তাকে ডেকে পাঠায় চীনের জন নিরাপত্তা ব্যুরো। সেখানে তাকে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করতে বলা হয়। ওই চিঠিতে তার বিরুদ্ধে ‘ভুয়া তথ্য তৈরির’ অভিযোগ আনা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, গুজব ছড়ানোয় লিসহ আটজনকে তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। পরে করোনা ভাইরাস ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর ডা. লি এর কাছে ক্ষমা চায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় উইবোতে প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় ডা. লি ওয়েনলিয়াং জানান, গত ১০ জানুয়ারি তার কাশি শুরু হয় এবং পরের দিন জ্বর আসে। আর তারও দুইদিন পর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। করোনা ভাইরাসের জন্য তাকে বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করা হয়েছিল, প্রতিবারই ফল নেতিবাচক এসেছিল অর্থাৎ ভাইরাস পাওয়া যায়নি। অবশেষে ৩০ জানুয়ারি তাকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদক / ফাহমিদা হক মিতি

Fahmida Hoque Miti:
Related Post