সলিমুল্লাহ মেডিকেলের প্রথম ব্যাচ ছিলাম আমরা। প্রথম যখন ভর্তি হতে আসি তখন বাবুবাজারের রাস্তাটা পাকা ছিলো না। একটা মেঠো পথের মত রাস্তায় রিক্সায় আব্বাকে ধরে এসেছিলাম। বিশাল ওভাল শেপের বাগান ছিলো একটা। এক পাশে ছিলো ক্যান্টিন। বাগানটি খুব সুন্দর ছিল। আমরা বাগানের একটি ফুল ও কখনো ছিড়তাম না। বুড়িগঙ্গার পানি ছিলো স্বচ্ছ, টলটলে। আমার মনে আছে আইটেম দেওয়ার দিন আমি বারান্দায় খালি লেফট রাইট করছিলাম। দিবো কি দিবো না। নিচে নেমে চলে আসার পর আব্বার চেহারা মনে পড়লো। আব্বা সবসময় আমার পড়ালেখা, পরীক্ষার খোঁজ খবর নিতেন, কেমন দিলাম, কত পেলাম । তাই আবার উঠে আইটেম দিতাম এবং ভালো ও করতাম।
এমবিবিএস এ পড়ার সময় যখনই ওটিতে ঢুকার সময় পেতাম এনেস্থেসিয়াকে খুব ভয় পেতাম, যন্ত্রটা দেখলেই ভয় লাগতো, যদি এই যন্ত্রটার কিছু হয়ে যায় তাহলে একটা মানুষ মনে হয় মারা যাবে। তখন তো স্পাইনাল এনেস্থেসিয়া ছিলো না। খুব কঠিন লাগতো। পরে একসময় বিভিন্ন দিক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিলাম এনেস্থেসিয়োলজিতেই ক্যারিয়ার করবো আমি।
আমি এনেস্থেসিয়োলজির কিংবদন্তি প্রফেসর সামাদ স্যারের কাছে গেলাম যে আমি ডি.এ করবো অর্থাৎ ডিপ্লোমা ইন এনেস্থেসিওলজি। ওখানে আরো ছিলেন প্রফেসর মির্জা স্যার, সার্জারির বিখ্যাত প্রফেসর আবু আহমেদ স্যার। তো সামাদ স্যার আমাকে দেখে ডি.এ কেটে লিখে দিলেন এফ.সি.পি.এস। আমি স্যারকে বললাম স্যার এফ.সি.পি.এস পার্ট ওয়ান পাস করা কারো হাটা দেখলেও আমার ভয় লাগে। পরবর্তীতে ৮৭ এর জানুয়ারিতে আমি এফ.সি.পি.এস পাশ করি। কিন্তু পথটা খুব সোজা ছিলো না । কারণ তখন বিটিভিতে ৮টার সংবাদের পর আমি স্বাস্থ্য বিষয়ক একটা অনুষ্ঠান প্রচার করি আমি। খুব পপুলার অনুষ্ঠান। আমার জনপ্রিয়তা তখন তুঙ্গে। বাসে, রিক্সায় আমি উঠতে পারতাম না। মানুষজন দেখে ফেলতো। অনেক কষ্ট করে বক্ষব্যাধি, এন.আই.সি.ভি.ডি তে গিয়ে গিয়ে শিখতাম আমি।বাংলাদেশে মেয়েদের মধ্যে প্রথম এনেস্থেসিয়োলজিতে ফেলো হলাম আমি।
এরপর ৮৮ তে সিংগাপুরে WHO এর ফেলো হিসেবে গেলাম নিউরোএনেস্থেসিয়োলজিতে। দীর্ঘদিনের কোর্স শেষে আমার বস আমাকে রেখে দিতে চেয়েছিলেন সিংগাপুরে। কিন্তু আমার মন পড়ে থাকতো দেশে। সিংগাপুরে রেডিওতে একটা বাংলা শব্দ শুনলেও কত ভালো লাগতো আমার !! আমি জানালাম আমি দেশে থাকতে চাই। সিংগাপুর থেকে এসে তখনকার আইপিজিএমআর এ (বর্তমান বিএসএমএমইউ) যোগ দেই। পর্যায়ক্রমে চাকুরি করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে অবসরে যাই। এখন ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজে কাজ করছি।
২০০৫ সালে ইংল্যান্ডের রয়াল কলেজ আমাকে তাদের পরীক্ষার অবজার্ভার হিসেবে আমন্ত্রণ জানায়। আর ২০১২ সালে আমাকে পরীক্ষক হিসেবে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় বস এসে পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললেন ” Thank you. Bravo Doctor Shahera! You have given the number as the same the shadow examiner has given. আমরা তোমার পেছনে একজন shadow examiner রেখেছিলাম। তিনি আমাদের কলেজের ফেলো এবং তার দেওয়া নাম্বারের সাথে তোমার দেওয়া নাম্বারের পয়েন্ট ওয়ান পার্থক্য ও নেই। ”
কবি কায়কোবাদ ছিলেন আমার দাদা। তিনি যেই আন্ধিপুকুরের ঢালে বসে “মহাশ্মশান” কাব্যগ্রন্থটি রচনা করেছিলেন আমি এখনো সেখানে যাই। পুকুরটা ছোট হয়ে এসেছে। কিন্তু এখনো যাই। ভালো লাগে। ক্লাস সিক্স থেকে ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত আমি নিয়মিত ” ছোটদের আসর ” এ লিখতাম। এখন পর্যন্ত আমার ৩২ টি কবিতার বই বের হয়েছে। দু-চার জায়গা থেকে সম্মাননাও পেয়েছি।
এইবার ৪৫ তম ব্যাচের প্রবেশ উপলক্ষে যে নবীনবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিলো এপ্রন পড়িয়ে দেওয়ার জন্যে। আমার মনে হলো আমি তো এখনো এই মিটফোর্ডেই বেঁচে আছি। আজও মিটফোর্ড নিয়ে কেউ কিছু বললে আমার খুব লাগে। আমি বর্তমান ছাত্রদের বলতে চাই, মূল বইটা পড়তে হবে। মোবাইল অন করে বেইলি লাভ পড়লে হয় না আসলে । বইয়ের পাতাটা উল্টাতে হয়। আর সবসময় মনে রাখবা ” Touch the patient, talk with them.”
……..
Prof. U H Shahera Khatun Bela
SS-01
1st female fellow of BCPS(Anaesthesiology)
Head of Department of Anaesthesiology,
Dhaka Community Medical College
লেখাটি অনুমতিক্রমে Humans of Mitford এর ফেইসবুক পেইজ https://www.facebook.com/humansofmitford
থেকে সংগৃহীত।
View Comments (55)
Fatima Moury madam k mone ache?
ম্যাডামকে হাজারো ছালাম
respect... :)
Israt Jahan. apu apnar jonno
Amdr clg a silo ksu din
Madam Shaheed monsur ali medical college e silen eksomoy.
DCMC te kaj korar somoy madam k j vhoy petam ?,,bt madam valo manus
Dr-Tarikul Islam Prantor
apu dhuke poren...ja ache kopale
স্বনামধন্য মিটফোর্ড ভেটেরান দের অসাধারণ সব গল্প শুনতে সাথেই থাকুন.... <3 <3 <3
http://m.facebook.com/humansofmitford
madam to onek moja kore kotha bole
Sotti ...!?