X

অগোছালো স্বাস্থ্যব্যবস্থা, অপরিকল্পিত প্রস্তুতি ও গিনিপিগ ইন্টার্ন ডাক্তার!

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদন, ২৫ এপ্রিল, ২০২০, শনিবার

কোভিড-১৯ প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় চীনের উহান শহরে ১৭ই নভেম্বর ২০১৯ সালে। আমাদের দেশে প্রথম শনাক্ত হয় ৮ই এপ্রিল ২০২০ সালে। মাঝখানে তিন তিনটি মাস! এত সময় কি প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট নয়?

অবশ্যই যথেষ্ট। তাইতো মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “আমাদের প্রস্তুতি যথেষ্ট, এমনকি উন্নত দেশগুলোর চেয়েও ভাল মোকাবিলা করছি আমরা”। তিনি বলেন, “পর্যাপ্ত পিপিই সরবরাহ এবং মজুদ আছে।” কিন্তু ডাক্তাররা সমানে দাবি করে যাচ্ছে ডাক্তাররা কোন মানসম্মত পিপিই নাই, এন-৯৫ মাস্ক নাই,ফেস শিল্ড নাই। চারিদিকে শুধুই হাহাকার!!

তাহলে কার কথা সত্যি?

নিজেদের দাবির সত্যতা প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তাররা নিজেদের আক্রান্ত হওয়ার মাধ্যমে। এ যেন অস্ত্রছাড়া যুদ্ধের শামিল! মাত্র দেড়মাসের মাথায় ৩০০ শতের ও অধিক চিকিৎসক আক্রান্ত (সূত্র বিডিএফ)। তাহলে এ সংকট মিথ্যে নয়। আমাদের ডাক্তাররা অনিরাপদ থেকেও হাল ছাড়েন নি।

প্রশ্ন আসে তখনই, যখন এই এরকম একটা চিত্র স্বাস্থ্যব্যবস্থার, তখন লকডাউনে বাড়ি চলে যাওয়া সদ্যপাশকৃত ডাক্তারদের এই পেশায় যোগদান করিয়ে বিপদে ফেলানোর মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

হতে পারে ইন্টার্ন ডাক্তাররা বিবেকের তাড়নায় পেশায় যোগ দিয়েছে অথবা প্রশাসনের চাপে দিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু নীতিনির্ধারকদের কি তাদের নিয়ে ভাবার দরকার ছিল না? অবশ্যই ছিল, কারণ করোনা রোগীদের মোকাবেলায় সদ্য পাশকৃত এসব শিক্ষানবীশ ডাক্তারদের তেমন কোন ভূমিকা নেই, এটা সিনিয়র ডাক্তাররাও মানেন।

এবার আসুন অনিরাপদ যুদ্ধক্ষেত্রে ইন্টার্নদের প্রবেশের কি ফলাফল হল, তা দেখা যাক –

১) স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে ইন্টার্ন শুরু হয় এই বছরের ২৩শে মার্চ থেকে। ১১ই এপ্রিল এক রোগী পরিচয় গোপন করে আসেন মাদারীপুর থেকে। অপারেশনের পর জ্ঞান ফেরানোর সময় বাড়ি জানতে চাইলে ঠিক কথা বলে দেন, নারায়ণগঞ্জ। রোগী কোভিড-১৯ পজিটিভ। ফলাফল সার্জারী ইউনিট -১ বন্ধ ও ইন্টার্নসহ অনেকে ডাক্তার আক্রান্ত। এ বিষয়ে কথা বললে সদ্য যোগদাকারী ইন্টার্ন ডাক্তার সজীব বলেন,”রোগীর তথ্য গোপন করা, গাইনি বিভাগের অব্যবস্থাপনা এসব বিষয় ইন্টার্ন আক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ী। করোনা আক্রান্ত নার্সের সংস্পর্শে যারা ছিল তাদের আইসোলেশনে না নেওয়া এবং সঠিক সময়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত না করায় এ পর্যন্ত ১২ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক সহ মোট ৩০ জন চিকিৎসক আক্রান্ত।

২) প্রায় একই রকম চিত্র উঠে এসেছে শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তাও এক রোগীর রোগের তথ্য গোপন করার খেসারত দিতে হচ্ছে পুরো হাসপাতালকে। ইন্টার্ন চিকিৎসক সেজুতি বলেন,”এ পর্যন্ত প্রায় ৪ জন ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ প্রায় ২০ জন চিকিৎসক আক্রান্ত”।

তাছাড়াও ইন্টার্ন আক্রান্তের খবর এসেছে আদ-দ্বীন ওমেন মেডিকেল কলেজ ও জহুরুল হক মেডিকেল কলেজ সহ আরো কয়েকটি মেডিকেল কলেজ থেকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চাইলেই নিশ্চিত সুরক্ষা দেওয়া যেত এই শিক্ষানবীশ ডাক্তারদের। দরকার ছিল একটি পদক্ষেপ আর একটুখানি পরিকল্পিত চিন্তার।

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক / নুরুল আমিন

Platform:
Related Post