একজন ডা. সুলেখার গল্প

কাল ৮ই মার্চ বিশ্ব নারী দিবস।ইচ্ছা  হচ্ছিল কিছু লিখি  ।

হঠাৎ মনে হল আপনাদের আজ, একজন নারী,একজন সন্তান,একজন মা,একজন ডা. সুলেখার গল্পটা শোনাই।
সুলেখা নামটা কাল্পনিক হলেও,চরিত্রটা কাল্পনিক না। চরিত্রটা আপনার আমার আশেপাশেরই একটা চরিত্র ।

ফার্স্ট প্রফের পর সুলেখার দুচোখ ভরা স্বপ্ন সে একদিন দেশ সেরা endocrinologist হবে।ভাগ্য দেবী সেদিন হয়তো আঁড়াল থেকে হেসেছিল।
তৃতীয় বর্ষে বিয়ে, পঞ্চম বর্ষে মা হয়ে যাওয়া, ফাইনাল প্রফ দিয়ে সংসার থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়া  ঘোরতর অন্ধকারে ডুবে ইন্টার্নশিপ শুরু করা।

বাচ্চা থাকায় কিছু ডিউটি সময় মত করতে না পারায় শাস্তির অজুহাতে একুশ দিন এক্সট্রা ডিউটি করে, লগ বুকটা সাইন করাতে হয়েছিল তাকে।আর তখনই সে জানতে শুরু করে ,আমাদের সমাজে একজন মেয়ে যতই ডাক্তার/ইঞ্জিনিয়ার/জজ/ব্যারিষ্টার যাইহোক না কেন কিছু কিছু তথাকথিত উচ্চ শিক্ষিত এবং পয়সাওয়ালা পুরুষের কাছে মেয়ে মানুষ মাত্রই একতাল মাংস পিণ্ড !!

তাই নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করেছিল সুলেখা । নিজের সম্মানের সাথে কখনোই কম্প্রোমাইজ করবে না ।

ইন্টার্নি শেষ করে বন্ধুরা যখন ব্যস্ত  বিসি এস , এফসিপিএর কিংবা বিয়ের শপিং এর স্বপ্ন নিয়ে । আর তখন আমাদের সুলেখা বাচ্চার হাত ধরে দৌড়াচ্ছে স্কুলের দরজায় দরজায়।কঠিন বাস্তবতায় সুলেখা জেনেছে সমাজ সংসার পরিবার বন্ধু মহলে একজন সিঙ্গেল মা শুধুই একজন অস্পৃশ্য,করুনার পাত্রী,তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও উপহাসের সস্তা উপকরণ ।

কিন্তু আত্মসম্মানবোধ আর সন্তানের প্রতি প্রবল দায়িত্ববোধের তাড়নায় পাগলের মত নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পথ খুঁজতে থাকে সে।একটা ব্যাপার সে বুঝতে পেরেছিল ।শুধু মাত্র ডিউটি ডাক্তার হিসেবে ভবিষ্যৎ সম্মান এবং সম্মানী দুটোই অনিশ্চিত।তাই একটা পোস্ট গ্রাজুয়েশনের জন্য অস্থির হয়ে ওঠে সুলেখা।কারণ খুব সাধারণ মানুষগুলোর জন্য পৃথিবীতে মাথা উঁচু করে টিকে থাকার একমাত্র অবলম্বন হল কাগজের সার্টিফিকেট। বাচ্চাকে সাথে নিয়ে তার সামনে একটা মাত্র পথ খোলা ছিল আর  সেটা হল এমপিএইচ (mph).
সময় নষ্ট না করে চোখের পানি মুছে কঠোরতার মুখোশ পরে ,জীবনযুদ্ধে  পড়ে আমাদের গল্পের নায়িকা।
একই সাথে নিজের লেখাপড়া, বাচ্চার স্কুল, চাকরি সব সামলে আজ মাথা উঁচু করে সামনে এগিয়ে চলেছে সুলেখা।

সুলেখা জানে দেশ সেরা ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন তার হয়তো আর পূরন হবে না।কিন্তু সেজন্য তার আর কোন আফসোস নেই। নিজের অপরিসীম ধৈর্য , সততা, ত্যাগ, বুদ্ধি, আত্মসম্মানবোধ দিয়ে তিলে তিলে পৃথিবীতে নিজের জন্য এবং নিজের সন্তানের জন্য এক টুকরো সম্মানের এবং নিরাপদের জীবন সে তৈরী করতে সমর্থ হয়েছে , এটাই সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে।

নিজের কাছে সুলেখা হেরে যায়নি।
যুগে যুগে সুলেখারা কখনো হার মেনে নেয়না।নীরবে নিভৃতে জীবন যুদ্ধটা চালিয়ে যায় ঠিকই।

পৃথিবীতে বিখ্যাত বহু নারীর জীবনী ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকে।
কিন্তু খুব সাধারণ সাদামাটা ঘরের পাশের সুলেখাদের খবর কেউ জানে না, কেউ না।

লিখেছেন ঃ ডা. মিম্মি

Ishrat Jahan Mouri

Institution : University dental college Working as feature writer bdnews24.com Memeber at DOridro charity foundation

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক সপ্তাহ

Tue Mar 8 , 2016
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি-২০১৬ থেকে ২ মার্চ-২০১৬ পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সাপ্তাহ ব্যাপী বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক সপ্তাহ এবং সপ্তাহের শেষে অনুষ্ঠিত হয় পিকনিক, প্রিয়াঙ্কা শুটিং স্পটে। প্রতি বছরের ন্যায় এবার ও অনুষ্ঠান গুলো আয়োজন করা হয় মেডিকেল কলেজ প্রাঙনে এবং কলেজের সবাই তা স্বতস্ফুর্ত ভাবে অংশগ্রহণ করে। […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo